পাতা:বৌদ্ধ-ভারত.djvu/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ অধ্যায়
৬৩

সম্মিলন হইতে পারিত। বিক্রমশিলা বিহারটি যে, অতি সুশোভন ছিল তদ্‌বিষয়ে সন্দেহ নাই। কারণ তিব্বতবাসীরা এই বিহারকে আদর্শ করিয়া তাহাদের সঙ্ঘারামগুলি নির্ম্মাণ করিয়াছে। বিক্রমশিলা বিদ্যায়তনে যোগশাস্ত্র, মহাযান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্ম্মশাস্ত্র, চিকিৎসা এবং বিবিধ বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হইত। খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে বৌদ্ধধর্ম্ম যখন তান্ত্রিকতায় পরিণত হয় তখন বিক্রমশিলা তন্ত্রশিক্ষার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। নানাদেশ হইতে বিদ্যার্থীরা এই স্থলে আগমন করিয়া বিদ্যালোচনা করিতেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি মহাবিদ্যালয় এবং ১০৮ জন অধ্যাপক ছিলেন। পণ্ডিতেরা এই বিদ্যায়তনে দ্বাররক্ষকের কার্য্য করিতেন। যে বিদ্যার্থী দ্বাররক্ষক পণ্ডিতদিগকে বিচারে সন্তুষ্ট করিতে না পারিতেন তিনি এই বিদ্যায়তনে প্রবেশ করিতে পারিতেন না। অন্যত্র কোন কোন শাস্ত্রালোচনা করিয়া যাঁহারা পাণ্ডিত্য লাভ করিতেন তাঁহারাই এখানে উচ্চতর বিদ্যাশিক্ষার সুযোগ পাইতেন। উয়ান চুয়াঙ্ বলেন,—এই প্রকারে পরীক্ষা করিয়া ছাত্র গ্রহণের প্রথা নালন্দায়ও প্রচলিত ছিল।

 ধর্ম্মপালের রাজত্বকালে বিক্রমশিলা সঙ্ঘারামের অধিনায়ক ছিলেন শ্রীবুদ্ধ জ্ঞানপদ। নরপতি নরপাল দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানপদকে বিহারের প্রধান পুরোহিত নিযুক্ত করিয়াছিলেন। তিব্বতরাজ এই পুরোহিত মহাশয়কে ধর্ম্মসংস্কার কার্য্যের উপযুক্ত মনে করিয়া তাঁহাকে তিব্বতে আহ্বান করিয়াছিলেন। ১০২৮ খৃষ্টাব্দে দীপঙ্কর তিব্বত গমন করিয়া সংস্কারকার্য্যে ব্রতী হইয়াছিলেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে যখন বক্তিয়ার বিহার জয় করেন, তখন মুসলমানেরা বিক্রমশিলা ধ্বংস করে। পালবংশীয় শেষ নরপতি ইন্দ্রদ্যুম্নের শাসনকালে এই শোচনীয় কাণ্ড ঘটিয়াছিল। ঐ সময়ে শাক্যশ্রী বিক্রমশিলার প্রধান পুরোহিত ছিলেন। তিনি প্রাণভয়ে প্রথমে উড়িষ্যায়, পরে সেখান হইতে তিব্বতে পলায়ন করেন।

 ভাগলপুর হইতে চব্বিশ মাইল দূরবর্ত্তী পাথরঘাটা নামক স্থানে বিক্রমশিলা সঙ্ঘারাম অবস্থিত ছিল, এইরূপ অনুমিত হইতেছে।