পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৮৭

 মঙ্গলা মাতঙ্গিনীকে জিজ্ঞাসা করিল, “বলি রাজবাটীর খবর কি?”

 মাতঙ্গিনী হাত উল্টাইয়া কহিল, “সে সব কথায় আমাদের কাজ কি ভাই?”

 মঙ্গলা কহিল, “ঠিক কথা। ঠিক কথা।”

 মঙ্গলার যে এ বিষয়ে সহসা মতের এতটা ঐক্য হইয়া যাইবে, তাহা মাতঙ্গিনী আশা করে নাই। সে কিঞ্চিৎ ফাঁফরে পড়িয়া কহিল, “তা’ তোমাকে বলিতে দোষ নাই; তবে আজ আমার বড় সময় নাই; আর একদিন সমস্ত বলিব।” বলিয়া বসিয়া রহিল।

 মঙ্গলা কহিল—“তা বেশ, আর একদিন শুনা যাইবে।”

 মাতঙ্গিনী অধীর হইয়া পড়িল, কহিল, “তবে আমি যাই ভাই। দেরি করিলাম বলিয়া আবার কত বকনি খাইতে হইবে। দেখ ভাই, সে দিন আমাদের ওখানে, রাজার জামাই আসিয়াছিলেন, তা’ তিনি যে দিন আসিয়াছিলেন সেই রাত্রেই কাহাকে না বলিয়া চলিয়া গিয়াছেন।”

 মঙ্গলা কহিল, “সত্য নাকি? বটে; কেন বল দেখি; তাই বলি মাতঙ্গ না হইলে আমাকে ভিতরকার খবর কেহ দিতে পারে না।”

 মাতঙ্গ প্রফুল্ল হইয়া কহিল, “আসল কথা কি জান? আমাদের যে বৌঠাকরুণটি আছেন, তিনি দুটি চক্ষে কাহারো ভাল দেখিতে পারেন না। তিনি কি মন্তর জানেন, স্বোয়ামীকে একেবারে ভেড়ার মতন করিয়া রাখিয়াছেন, তিনি—না ভাই; কাজ নাই, কে কোথা দিয়া শুনিবে আর বলিবে মাতঙ্গ রাজবাড়ির কথা বাহিরে বলিয়া বেড়ায়।”

 মঙ্গলা আর কৌতূহল সামলাইতে পারিল না; যদিও সে জানিত, আর খানিকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিলে মাতঙ্গ আপনি সমস্ত বলিবে, তবু তাহার বিলম্ব সহিল না, কহিল, “এখানে কোন লোক নাই নাতনী। আর আপনা-আপনির মধ্যে কথা, ইহাতে আর দোষ কি? তা’ তোমাদের বৌঠাকরুণ কি করিলেন?”