পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৮৯

 মাতঙ্গ কহিল “কেন ভাই, তােমার এত মাথাব্যথা কেন?”

 মঙ্গলা কহিল, “বলি তা’ নয়। একবার দেখিলেই বুঝিতে পারিব, কি মন্ত্রে সে বশ করিয়াছে, আমার মন্ত্র খাটিবে কি না!”

 মাতঙ্গ কহিল, “তা’ বেশ, আজ তবে আসি!” বলিয়া চুবড়ি লইয়া চলিয়া গেল।

 মাতঙ্গ চলিয়া গেলে মঙ্গলা যেন ফুলিতে লাগিল, দাঁতে দাঁত লাগাইয়া চক্ষু-তারকা প্রসারিত করিয়া বিড়্ বিড়্ করিয়া বকিতে লাগিল।


পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ।

 বসন্তরায় চলিয়া গেলেন। তখন সন্ধ্যা হইয়া আসিয়াছে। বিভা প্রাসাদের ছাদের উপর গেল। ছাদের উপর হইতে দেখিল, পাল্কী চলিয়া গেল। বসন্তরায় পাল্কীর মধ্য হইতে মাথাটি বাহির করিয়া একবার মুখ ফিরাইয়া পশ্চাতে চাহিয়া দেখিলেন। সন্ধ্যার অন্ধকারের মধ্যে চোখের জলের মধ্য হইতে পরিবর্ত্তনহীন অবিচলিত, পাষাণহৃদয় রাজবাটীর দীর্ঘ কঠোর দেয়ালগুলা ঝাপ্সা ঝাপ্সা দেখিতে পাইলেন। পাল্কী চলিয়া গেল, কিন্তু বিভা সেইখানে দাঁড়াইয়া রহিল। পথের পানে চাহিয়া রহিল। তারাগুলি উঠিল, দীপ গুলি জ্বলিল, পথে লােক রহিল না। বিভা দাঁড়াইয়া চুপ করিয়া চাহিয়া রহিল। সুরমা তাহাকে সারাদেশ খুঁজিয়া, কোথাও না পাইয়া অবশেষে ছাদে গিয়া উপস্থিত হইল। বিভার গলা ধরিয়া স্নেহের স্বরে কহিল, “কি দেখিতেছিস্ বিভা?” বিভা নিশ্বাস ফেলিয়া কহিল, “কে জানে ভাই!” বিভা সমস্তই শূন্যময় দেখিতেছে, তাহার প্রাণে সুখ নাই। সে, কেন যে ঘরের মধ্যে যায়, কেন যে ঘর হইতে বাহির হইয়া আসে, কেন শুইয়া পড়ে, কেন উঠিয়া যায়, কেন দুই প্রহর মধ্যাহ্নে বাড়ির এ ঘরে ও ঘরে ঘুরিয়া বেড়ায়, তাহার কারণ খুঁজিয়া পায় না। রাজবাড়ি হইতে তাহার বাড়ি