পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

চলিয়া গেছে যেন, রাজবাড়িতে যেন তাহার ঘর নাই। অতি ছেলেবেলা হইতে নানা খেলাধূলা, নানা সুখ দুঃখ, হাসি কান্নায় মিলিয়া রাজবাটীর মধ্যে তাহার জন্য যে একটি সাধের ঘর বাঁধিয়া দিয়াছিল, সে ঘরটি একদিনে কে ভাঙিয়া দিল রে! এঘর ত আর তাহার ঘর নয়! সে, এখন গৃহের মধ্যে গৃহহীন, তাহার দাদামহাশয় ছিল, গেল, তাহার ——চন্দ্রদ্বীপ হইতে বিভাকে লইতে কবে লােক আসিবে? হয়ত রামমােহন মাল রওনা হইয়াছে, এতক্ষণে তাহারা না জানি কোথায়! বিভার সুখের এখনো কিছু অবশিষ্ট আছে। তাহার অমন দাদা আছে, তাহার প্রাণের সুরমা আছে, কিন্তু তাহাদের সম্বন্ধেও যেন একটা কি বিপদ ছায়ার মত পশ্চাতে ফিরিতেছে। যে বাড়ির ভিটা ভেদ করিয়া একটা ঘন ঘাের গুপ্ত রহস্য অদৃশ্য ভাবে ধূমায়িত হইতেছে সে বাড়িকে কি আর ঘর বলিয়া মনে হয়?

 উদয়াদিত্য শুনিলেন কর্ম্মচ্যুত হইয়া সীতারামের দুর্দ্দশা হইয়াছে। একে তাহার এক পয়সার সম্বল নাই, তাহার উপর তাহার অনেক গুলি গলগ্রহ জুটিয়াছে। কারণ যখন সে রাজবাড়ি হইতে মােটা মাহিয়ানা পাইত, তখন তাহার পিসা, সহসা স্নেহের আধিক্য বশত কাজ কর্ম্ম সমস্ত ছাড়িয়া দিয়া তাহার স্নেহাস্পদের বিরহে কাতর হইয়া পড়িয়াছিল; মিলনের সুব্যবস্থা করিয়া লইয়া আনন্দে গদগদ হইয়া কহিল যে, সীতারামকে দেখিয়াই তাহার ক্ষুধা তৃষ্ণা সমস্ত দূর হইয়াছে। ক্ষুধা তৃষ্ণা দূর হওয়ার বিষয়ে অনেক প্রমাণ আছে, কিন্তু কেবল সীতারামকে দেখিয়াই হইত কি না, সে বিষয়ে কোন প্রমাণ নাই। সীতারামের এক দূর সম্পর্কের বিধবা ভগিনী তাহার এক পুত্রকে কাজ কর্ম্মে পাঠাইবার উদ্যোগ করিতেছিল, এমন সময়ে সহসা তাহার চৈতন্য হইল যে, বাছাকে ছােট কাজে নিযুক্ত করিলে বাছার মামাকে অপমান করা হয়, এই বুঝিয়া সে বাছার মামার মান রক্ষা করিবার জন্য কোনমতে সে কাজ করিতে