পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৯১

পারিল না। এইরূপে সে মান রক্ষা করিয়া সীতারামকে ঋণী করিল ও তাহার বিনিময়ে আপনার প্রাণরক্ষার বন্দোবস্ত করিয়া লইল। ইহার উপর সীতারামের বিধবা মাতা আছে ও এক অবিবাহিতা বালিকা কন্যা আছে। এদিকে আবার সীতারাম লোকটি অতিশয় সৌখিন, আমোদ প্রমোদটি নহিলে তাহার চলে না। সীতারামের অবস্থার পরিবর্ত্তন হইয়াছে, অথচ তাহার সঙ্গে সঙ্গে আনুষঙ্গিক পরিবর্ত্তন কিছুই হয় নাই। তাহার পিসার ক্ষুধাতৃষ্ণা ঠিক সমান রহিয়াছে; তাহার ভাগিনেয়টির যতই বয়স বাড়িতেছে, ততই তাহার উদরের প্রসর ও মামার মান অপমানের প্রতি দৃষ্টি অধিক করিয়া বাড়িতেছে। সীতারামের টাকার থলি ব্যতীত আর কাহারো উদর কমিবার কোন লক্ষণ প্রকাশ করিতেছে না। সীতারামের অন্যান্য গলগ্রহের সঙ্গে সখটিও বজায় আছে, সেটি ধারের উপর বর্দ্ধিত হইতেছে, সুদও যে পরিমাণে পুষ্ট হইতেছে, সেও সেই পরিমাণে পুষ্ট হইয়া উঠিতেছে। উদয়াদিত্য সীতারামের দারিদ্র্যদশা শুনিয়া তাহার ও ভাগবতের মাসিক বৃত্তি নির্ধারণ করিয়া দিলেন। সীতারাম টাকাটা পাইয়া অত্যন্ত লজ্জিত হইয়া পড়িল। মহারাজার নিকট উদয়াদিত্যের নাম করিয়া অবধি সে নিজের কাছে ও উদয়াদিত্যের কাছে নিতান্ত অপরাধী হইয়া আছে। উদয়াদিত্যের টাকা পাইয়া সে কাঁদিয়া ফেলিল। এক দিন যুবরাজের সাক্ষাৎ পাইয়া তাহার পা জড়াইয়া ধরিয়া তাঁহাকে ভগবান্, জগদীশ্বর, দয়াময় সম্বোধন করিয়া বিস্তর ক্ষমা চাহিল। ভাগবত লোকটা অত্যন্ত ঠাণ্ডা প্রকৃতির! সে সতরঞ্চ খেলে, তামাক খায় ও প্রতিবেশীদিগকে স্বর্গ নরকের জমী বিলি করিয়া দেয়। সে যখন উদয়াদিত্যের টাকা পাইল, তখন মুখ বেঁকাইয়া নানা ভাব ভঙ্গীতে জানাইল যে, যুবরাজ তাহার যে সর্ব্বনাশ করিয়াছেন, এ টাকাতে তাহার কি প্রতিশোেধ হইবে! টাকাটা লইতে সে কিছুমাত্র আপত্তি করিল না।