পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
বৌঠাকুরাণীর হাট।

চারিদিকে দেখিতেন, একবার বিছানায় যাইতেন, দেখিতেন—কেহ আছে কি না! যে উদয়াদিত্য সমস্ত দিন শত শত ক্ষুদ্র কাজে ব্যস্ত থাকিতেন, দরিদ্র প্রজারা তাহাদের ক্ষেতের ও বাগানের ফল মূল শাক সবজি উপহার লইয়া তাঁহার কাছে আসিত, তিনি তাহাদের জিজ্ঞাসা পড়া করিতেন, তাহাদের পরামর্শ দিতেন; আজ কাল আর সে সব কিছুই করিতে পারেন না, তবুও সন্ধ্যাবেলায় শ্রান্ত হইয়া পড়েন— শ্রান্তপদে শয়নালয়ে আসেন, মনের মধ্যে যেন একটা আশা থাকে যে, সহসা শয়নকক্ষের দ্বার খুলিলেই দেখিতে পাইব—সুরমা সেই বাতায়নে বসিয়া আছে। উদয়াদিত্য যখন দেখিতে পান, বিভা একাকী ম্লান মুখে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, তখন তাঁহার প্রাণ কাঁদিয়া উঠে। বিভাকে কাছে ডাকেন, তাহাকে আদর করেন, তাহাকে কত কি স্নেহের কথা বলেন, অবশেষে দাদার হাত ধরিয়া বিভা কাঁদিয়া উঠে, উদয়াদিত্যেরও চোখ দিয়া জল পড়িতে থাকে! এক দিন উদয়াদিত্য বিভাকে ডাকিয়া কহিলেন, “বিভা, এ বাড়িতে আর তাের কে রহিল? তােকে এখন শ্বশুরবাড়ি পাঠাইবার বন্দোবস্ত করিয়া দিই। কি বলিস? আমার কাছে লজ্জা করিস্ না বিভা! তুই আর কার কাছে তাের মনের সাধ প্রকাশ করিবি বল্?” বিভা চুপ করিয়া রহিল। কিছু বলিল না। এ কথা কি আর জিজ্ঞাসা করিতে হয়? পিতৃ-ভবনে কি আর তাহার থাকিতে ইচ্ছা করে? পৃথিবীতে যে তাহার একমাত্র জুড়াইবার স্থল আছে, সেইখানে—সেই চন্দ্রদ্বীপে যাইবার জন্য তাহার প্রাণ অস্থির হইবে না ত কি? কিন্তু তাহাকে লইতে পর্য্যন্ত একটিও ত লােক আসিল না! কেন আসিল না?

 বিভাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাইবার প্রস্তাব উদয়াদিত্য একবার পিতার নিকট উত্থাপন করিলেন। প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “বিভাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাইতে আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু তাহাদের নিকট যদি