পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১০৭

মহারাজার স্বর্গীয় পিতামহের কাছে আবেদন করে। অনেক কাঁদাকাটা করাতে তিনি তাঁহার বাঁ পায়ের ক’ড়ে আঙুল দিয়া তাঁহাকে টীকা পরাইয়া দেন।”

 রমাই ভাঁড় কহিতেছে, “বিক্রমাদিত্যের ছেলে প্রতাপাদিত্য, উহারা ত দুই পুরুষে রাজা! প্রতাপাদিত্যের পিতামহ ছিল কেঁচো, কেঁচোর পুত্র হইল জোঁক, বেটা প্রজার রক্ত খাইয়া খাইয়া বিষম ফুলিয়া উঠিল, সেই জোঁকের পুত্র আজ মাথা খুঁড়িয়া খুঁড়িয়া মাথাটা কুলােপানা করিয়া তুলিয়াছে ও সাপের মত চক্র ধরিতে শিখিয়াছে। আমরা পুরুষানুক্রমে রাজসভায় ভাঁড়বৃত্তি করিয়া আসিতেছি, আমরা বেদে, আমরা জাত সাপ চিনি না?” রাজা রামচন্দ্র রায় আজ বিষম সন্তুষ্ট হইয়া সহাস্য বদনে গুড়গুড়ি টানিতে লাগিলেন। আজকাল প্রত্যই সভায় প্রতাপাদিত্যের উপর একবার করিয়া আক্রমণ হয়। প্রতাপাদিত্যের পৃষ্ঠ লক্ষ্যপূর্ব্বক শব্দভেদী বচন-বাণ বর্ষণ করিয়া সেনানীদের তুণ নিঃশর হইলে সভা ভঙ্গ হয়। যাহা হউক, আজিকার বিচারে অপরাধী অনেক কাঁদাকাটি করাতে দোর্দ্দণ্ডপ্রতাপ রামচন্দ্র রায় কহিলেন—“আচ্ছা যা —এ যাত্রা বাঁচিয়া গেলি, ভবিষ্যতে সাবধান থাকিস্!”

 অন্যান্য সভাসদ চলিয়া গেল, কেবল মন্ত্রী ও রমাই ভাঁড় রাজার কাছে রহিল। প্রতাপাদিত্যের কথাই চলিতে লাগিল।

 রমাই কহিল, “আপনি ত চলিয়া এলেন, এদিকে যুবরাজ বাবাজি বিষম গােলে পড়িলেন। রাজার অভিপ্রায় ছিল, কন্যাটি বিধবা হইলে হাতের লােহ ও বালা দুগাছি বিক্রয় করিয়া রাজকোষে কিঞ্চিৎ অর্থাগম হয়। যুবরাজ তাহাতে ব্যাঘাত করিলেন। তাহা লইয়া তম্বী কত?”

 রাজা হাসিতে লাগিলেন, কহিলেন “বটে!”

 মন্ত্রী কহিলেন, “মহারাজ, শুনিতে পাই, প্রতাপাদিত্য আজকাল