পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১১১

 রামমােহন কহিল, “আজ্ঞা হাঁ। অন্তঃপুর শূন্য হইয়া আছে, আমি তাহা দেখিতে পারিব না। অন্তঃপুরে যাই মহারাজের ঘরে কাহাকেও দেখিতে পাই না, আমার যেন প্রাণ-কেমন করিতে থাকে। আমার মা-লক্ষ্মী গৃহে আসিয়া গৃহ উজ্জ্বল করুন আমরা দেখিরা চক্ষু সার্থক করি।”

 রাজা কহিলেন, “রামমােহন, তুমি পাগল হইয়াছ? সে মেয়েকে আমি ঘরে আনি?”

 রামমােহন নেত্র বিস্ফারিত করিয়া কহিল, “কেন মহারাজ, আমার মাঠাকুরাণী কি অপরাধ করিয়াছেন?”

 রাজা কহিলেন, “বল কি রামমােহন? প্রতাপাদিত্যের মেয়েকে আমি ঘরে আনিব?”

 রামমােহন কহিল, “কেন আনিবেন না? প্রতাপাদিত্যের সহিত তাঁহার সম্পর্ক কিসের? যত দিন বিবাহ না হয় তত দিন মেয়ে বাপের; বিবাহ হইলে পর আর তাহাতে বাপের অধিকার থাকে না। এখন আপনার মহিষী আপনার—আপনি যদি তাঁহাকে ঘরে না আনেন আপনি যদি তাঁহাকে সমাদর না করেন, তবে আর কে করিবে?”

 রাজা কহিলেন, “প্রতাপাদিত্যের মেয়েকে যে আমি বিবাহ করিয়াছি, ইহাই যথেষ্ট হইয়াছে, আবার তাহাকে ঘরে আনিব? তাহা হইলে মান রক্ষা হইবে কি করিয়া?”

 রামমােহন কহিল, “মান রক্ষা? আপনার নিজের মহিষীকে আপনি পরের ঘরে ফেলিয়া রাখিয়াছেন, তাহার উপর আপনার কোন অধিকার নাই, তাহার উপর অন্য লোক যাহা-ইচ্ছা প্রভুত্ব করিতে পারে, ইহাতেই কি আপনার মান রক্ষা হইতেছে?”

 রাজা কহিলেন, “যদি প্রতাপাদিত্য মেয়েকে না দেয়?”

 রামমােহন বিশাল বক্ষ ফুলাইয়া কহিল, “কি বলিলেন মহারাজ?