পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১২
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

যদি না দেয়? এতবড় সাধ্য কাহার যে দিবে না? আমার মা-জননী, আমাদের ঘরের মা-লক্ষ্মী কাহার সাধ্য তাঁহাকে আমাদের কাছ হইতে রাখিতে পারে? যত বড় প্রতাপাদিত্যই হউন না কেন, তাঁহার হাত হইতে কাড়িয়া লইব। এই বলিয়া গেলাম। আমার মাকে আমি আনিব, তুমি বারণ করিবার কে?” বলিয়া রামমােহন প্রস্থানের উপক্রম করিল।

 রাজা তাড়াতাড়ি কহিলেন—“রামমােহন, যেও না, শােন শােন। আচ্ছা তুমি মহিষীকে আনিতে যাও তাহাতে কোন আপত্তি নাই, কিন্তু— দেখ—এ কথা যেন কেহ শুনিতে না পায়। রমাই কিংবা মন্ত্রীর কানে যেন এ কথা না উঠে!”

 রামমােহন কহিল, “যে আজ্ঞা মহারাজ!” বলিয়া চলিয়া গেল।

 যদিও মহিষী রাজপুরে আসিলেই সকলে জানিতে পারিবে, তথাপি সে অনেক বিলম্ব আছে, তাহার জন্য প্রস্তুত হইবার সময় আছে, আপাতত উপস্থিত লজ্জার হাত এড়াইতে পারিলেই রামচন্দ্র রায় বাঁচেন।

বিংশ পরিচ্ছেদ।

 উদয়াদিত্য কিসে সুখে থাকেন, দিনরাত বিভার সেই একমাত্র চেষ্টা। নিজের হাতে সে তাঁহার সমস্ত কাজ করে। সে নিজে তাঁহার খাবার আনিয়া দেয়, আহারের সময় সম্মুখে বসিয়া থাকে, সামান্য বিষয়েও ত্রুটি হইতে দেয় না। যখন সন্ধ্যার সময় উদয়াদিত্য তাঁহার ঘরে আসিয়া বসেন, দুই হাতে চক্ষু আচ্ছাদন করিয়া বসিয়া থাকেন—বুঝি চোখ দিয়া জল পড়িতে থাকে, তখন বিভা আস্তে আস্তে তাঁহার পায়ের কাছে আসিয়া বসে—কথা উত্থাপন করিতে চেষ্টা করে, কিছুই কথা যােগায় না। দুই জনে স্তব্ধ, কাহারও মুখে কথা নাই। মলিন দীপের আলাে মাঝে মাঝে কাঁপিয়া কাঁপিয়া উঠিতেছে, সেই সঙ্গে সঙ্গে দেওয়ালের উপরে