পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১১৫

প্রকাশ্যে অথবা গােপনে অর্থ সাহায্য করিতে যুবরাজের আর সাহস হয় না। যখনি তাহাদের কষ্টের কথা শুনেন, তথনি মনে করেন “আজই আমি টাকা পাঠাইয়া দেব।” তাহার পরেই ইতস্তত করিতে থাকেন, পাঠানো আর হয় না।

 কেহ যেন না মনে করেন, উদয়াদিত্য প্রাণের ভয়ে এরূপ করিতেছেন। সম্প্রতি জীবনের প্রতি তাঁহার যে পূর্ব্বাপেক্ষা বিশেষ আসক্তি জন্মিয়াছে, তাহা নহে। তাঁহার মনে একটা অন্ধ ভয় উপস্থিত হইয়াছে। প্রতাপাদিত্যকে তিনি যেন রহস্যময় কি একটা মনে করেন! যেন উদয়াদিত্যের অদৃষ্ট, উদয়াদিত্যের ভবিষ্যৎ-জীবনের প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত্ত প্রতাপাদিত্যের মুষ্টির মধ্যে রহিয়াছে। উদয়াদিত্য যখন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করিতে যাইতেছেন, জীবনের শেষ মুহূর্ত্তে অবস্থান করিতেছেন, তখনও যদি প্রতাপাদিত্য ভ্রূকুঞ্চিত করিয়া বাঁচিতে আদেশ করেন, তাহা হইলে যেন তখনাে তাঁহাকে মৃত্যুর মুখ হইতে ফিরিয়া আসিতে হইবে।

একবিংশ পরিচ্ছেদ।

 বিধবা রুক্মিণীর (মঙ্গলার) কিঞ্চিৎ নগদ টাকা আছে। সেই টাকা খাটাইয়া সুদ লইয়া সে জীবিকা নির্ব্বাহ করে। রূপ এবং রূপা এই দুয়ের জোরে সে অনেককে বশে রাখিয়াছে। সীতারাম সৌখীন লােক, অথচ ঘরে এক পয়সার সংস্থান নাই, এইজন্য রুক্মিণীর রূপ ও রূপা উভয়ের প্রতিই তাহার আন্তরিক টান আছে। যে দিন ঘরে হাঁড়ি কাঁদিতেছে, সে দিন সীতারামকে দেখ, দিব্য নিশ্চিন্ত মুখে হাতে লাঠি লইয়া পাতলা চাদর উড়াইয়া বুক ফুলাইয়া রাস্তা দিয়া চলিতেছে, মঙ্গলার বাড়ি যাইবে। পথে যদি কেহ জিজ্ঞাসা করে, “কেমন হে সীতারাম, সংসার কেমন চলিতেছে?” সীতারাম তৎক্ষণাৎ অম্লানবদনে বলে, “বেশ চলিতেছে! কাল আমাদের ওখানে নিমন্ত্রণ রহিল!” সীতারামের