পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

বড় বড় কথাগুলা কিছুমাত্র কমে নাই, বরঞ্চ অবস্থা যতই মন্দ হইতেছে কথার পরিমাণ লম্বা ও চওড়ার দিকে ততই বাড়িতেছে। সীতারামের অবস্থাও বড় মন্দ হইতে চলিল। সম্প্রতি এমন হইয়া দাঁড়াইয়াছে যে, পিসা তাঁহার অনারারি পিসা-বৃত্তি পরিত্যাগ করিয়া স্বদেশে ফিরিয়া যাইতে মানস করিতেছেন।

 আজ টাকার বিশেষ আবশ্যক হইয়াছে, সীতারাম রুক্মিণীর বাড়িতে আসিয়াছে। হাসিয়া, কাছে ঘেঁসিয়া কহিল—

“ভিক্ষা যদি দেবে রাই,
(আমার) সােনা রূপায় কাজ নাই,
(আমি) প্রাণের দায়ে এসেছি হে,
মান রতন ভিক্ষা চাই।”

 না ভাই, ছড়াটা ঠিক খাটিল না। মান রতনে আমার আপাতত তেমন আবশ্যক নাই, যদি আবশ্যক হয় পরে দেখা যাইবে; আপাতত কিঞ্চিৎ সােনা রূপা পাইলে কাজে লাগে!”

 রুক্মিণী সহসা বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করিয়া কহিল, “তা’ তােমার যদি আবশ্যক হইয়া থাকে ত তোমাকে দিব না ত কাহাকে দিব?”

 সীতারাম তাড়াতাড়ি কহিল, “নাঃ—আবশ্যক এমনিই কি! তবে কি জান ভাই, আমার মার কাছে টাকা থাকে, আমি নিজের হাতে টাকা রাখি না। আজ সকালে মা যােড়াঘাটায় তাঁর জামাইয়ের বাড়ি গিয়াছেন। টাকা বাহির করিয়া দিতে ভুলিয়া গেছেন। তা আমি কালই শােধ করিয়া দিব!”

 মঙ্গলা মনে মনে হাসিয়া কহিল, “তােমার অত তাড়াতাড়ি করিবার আবশ্যক কি? যখন সুবিধা হয় শােধ দিলেই হইবে। তােমার হাতে দিতেছি, এ ত আর জলে ফেলিয়া দিতেছি না?” জলে ফেলিয়া দিলেও