পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১২৩

 একদিন সকালে সীতারাম আসিয়া ভাগবতকে জিজ্ঞাসা করিল “দাদা কেমন আছ হে?”

 ভাগবত কহিল, “ভাল না।”

 সীতারাম কহিল, “কেন বল দেখি?”

 ভাগবত কিয়ৎক্ষণ তামাক টানিয়া সীতারামের হাতে হুঁকা দিয়া কহিল “বড় টানাটানি পড়িয়াছে।”

 সীতারাম কহিল “বটে? তা কেমন করিয়া হইল?”

 ভাগবত মনে মনে কিঞ্চিৎ রুষ্ট হইয়া কহিল, “কেমন করিয়া হইল? তােমাকেও তাহা বলিতে হইবে না কি? আমি ত জানিতাম আমারো যে দশা তােমারো সে দশা!”

 সীতারাম কিছু অপ্রস্তুত হইয়া কহিল, “না, হে, আমি সে কথা কহিতেছি না, আমি বলিতেছি তুমি ধার কর না কেন?”

 ভাগবত কহিল, “ধার করিলে ত শুধিতে হইবে। শুধিব কি দিয়া? বিক্রি করিবার ও বাঁধা দিবার জিনিষ বড় অধিক নাই।”

 সীতারাম সগর্ব্বে কহিল, “তােমার কত টাকা ধার চাই, আমি দিব।”

 ভাগবত কহিল, “বটে? তা এতই যদি তােমার টাকা হইয়া থাকে যে, এক মুঠা জলে ফেলিয়া দিলেও কিছু না আসে যায়, তা হইলে আমাকে গােটা দশেক দিয়া ফেল। কিন্তু আগে হইতে বলিয়া রাখিতেছি, আমার শুধিবার শক্তি নাই!”

 সীতারাম কহিল, “সে জন্যে, দাদা, তােমাকে ভাবিতে হইবে না।”

 সীতারামের কাছে এইরূপ সাহায্যপ্রাপ্তির আশা পাইয়া ভাগবত বন্ধুতার উচ্ছ্বাসে যে নিতান্ত উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিয়াছিল, তাহা নহে। আর এক ছিলিম তামাক সাজিয়া চুপ করিয়া বসিয়া টানিতে লাগিল।

 সীতারাম আস্তে আস্তে কথা পাড়িল—“দাদা, রাজার অন্যায় বিচারে আমাদের ত অন্ন মারা গেল।”