পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১২৫

 সীতারাম আরাে গর্ব্বিত হইয়া উঠিল। কয়দিন ধরিয়া ক্রমিক পরামর্শ চলিতে লাগিল।

 পরামর্শ করিয়া যাহা স্থির হইল, তাহা এই, একটা জাল দরখাস্ত লিখিতে হইবে, যেন যুবরাজ প্রতাপাদিত্যের নামে সম্রাট-বিদ্রোহিতার অভিযােগ করিয়া নিজে রাজ্য পাইবার জন্য দরখাস্ত করিতেছেন। তাহাতে যুবরাজের শীল-মােহর মুদ্রিত থাকিবে। রুক্মিণী যে আংটিটি লইয়া আসিয়াছে, তাহাতে যুবরাজের নাম মুদ্রাঙ্কিত শীল আছে, অতএব কাজ অনেকটা অগ্রসর হইয়া আছে।

 পরামর্শমত কাজ হইল। একখানা জাল দরখাস্ত লেখা হইল, তাহাতে যুবরাজের নাম মুদ্রিত রহিল। নির্ব্বোধ সীতারামের উপর নির্ভর করা যায় না, অতএব স্থির হইল, ভাগবত নিজে দরখাস্ত লইয়া দিলীশ্বরের হস্তে সমর্পণ করিবে।

 ভাগবত সেই দরখাস্তখানি লইয়া দিল্লীর দিকে না গিয়া প্রতাপ আদিত্যের কাছে গেল। মহারাজকে কহিল, “উদয়াদিত্যের এক ভৃত্য এই দরখাস্তটি লইয়া দিল্লীর দিকে যাইতেছিল, আমি কোন সূত্রে জানিতে পারি। ভৃত্যটা দেশ ছাড়িয়া পলাইয়া গেছে, দরখাস্তটি লইয়া আমি মহারাজার নিকট আসিতেছি।” ভাগবত সীতারামের নাম করে নাই। দরখাস্ত পাঠ করিয়া প্রতাপাদিত্যের কি অবস্থা হইল তাহা আর বলিবার আবশ্যক করে না। ভাগবতের পুনর্ব্বার রাজবাড়িতে চাক্‌রী হইল।

ত্রয়ােবিংশ পরিচ্ছেদ।

 বিভার প্রাণের মধ্যে আঁধার করিয়া আসিয়াছে। ভবিষ্যতে কি যেন একটা মর্ম্মভেদী দুঃখ, একটা মরুময়ী নিরাশা, জীবনের সমস্ত সুখের জলাঞ্জলি, তাহার জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে, প্রতি মুহূর্ত্তে তাহার কাছে কাছে সরিয়া আসিতেছে। সেই যে জীবনশূন্যকারী চরাচরগ্রাসী শুষ্ক