পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

সীমাহীন ভবিষ্যৎ অদৃষ্টের আশঙ্কা, তাহারি একটা ছায়া আসিয়া যেন বিভার প্রাণের মধ্যে পড়িয়াছে। বিভার মনের ভিতরে কেমন করিতেছে! বিভা বিছানায় একেলা পড়িয়া আছে। এ সময়ে বিভার কাছে কেহ নাই। বিভা নিশ্বাস ফেলিয়া বিভা কাঁদিয়া বিভা আকুল হইয়া কহিল, “আমাকে কি তবে পরিত্যাগ করিলে? আমি তােমার কি অপরাধ করিয়াছি?” কাঁদিয়া কাঁদিয়া কহিতে লাগিল, “আমি কি অপরাধ করিয়াছি?” দুটি হাতে মুখ ঢাকিয়া বালিশ বুকে লইয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া বার বার করিয়া কহিল “আমি কি করিয়াছি?” “একখানি পত্র না, একটি লােকও আসিল না, কাহারো মুখে সংবাদ শুনিতে পাই না। আমি কি করিব? বুক ফাটিয়া ছট্ ফট্ করিয়া সমস্ত দিন ঘরে ঘরে ঘুরিয়া বেড়াইতেছি, কেহ তােমার সংবাদ বলে না, কাহারো মুখে তােমার নাম শুনিতে পাই না! মা গো মা দিন কি করিয়া কাটিবে!” এমন কত দিন গেল। এমন কত মধ্যাহ্নে কত অপরাহ্ণে কত রাত্রে সঙ্গীহীন বিভা রাজবাড়ির শূন্য ঘরে ঘরে একখানি শীর্ণ ছায়ার মত ঘুরিয়া বেড়ায়!

 এমন সময় একদিন প্রাতঃকালে রামমােহন আসিয়া “মা গাে জয় হােক্” বলিয়া প্রণাম করিল, বিভা এমনি চমকিয়া উঠিল, যেন তাহার মাথায় একটা সুখের বজ্র ভাঙিয়া পড়িল। তাহার চোখ দিয়া জল বাহির হইল। সে সচকিত হইয়া কহিল, “মােহন, তুই এলি!”

 “হাঁ মা, দেখিলাম, মা আমাদের ভুলিয়া গেছেন, তাঁহাকে একবার স্মরণ করাইয়া আসি!”

 বিভা কত কি জিজ্ঞাসা করিবে মনে করিল কিন্তু লজ্জায় পারিল না—বলে বলে করিয়া হইয়া উঠিল না—অথচ শুনিবার জন্য প্রাণটা ব্যাকুল হইয়া রহিল।

 রামমােহন বিভার মুখের দিকে চাহিয়া কহিল, “কেন মা, তােমার