পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১২৭

মুখখানি অমন মলিন কেন? তােমার চোখে কালি পড়িয়াছে। মুখে হাসি নাই। চুল রুক্ষ। এস মা, আমাদের ঘরে এস। এখানে বুঝি তােমাকে যত্ন করিবার কেহ নাই!”

 বিভা ম্লান হাসি হাসিল; কিছু কহিল না! হাসিতে হাসিতে হাসি আর রহিলনা। দুই চক্ষু দিয়া জল পড়িতে লাগিল—শীর্ণ বিবর্ণ দুটি কপােল প্লাবিত করিয়া জল পড়িতে লাগিল, অশ্রু আর থামে না! বহু। দিন অনাদরের পর একটু আদর পাইলে যে অভিমান উথলিয়া উঠে, বিভা সেই অতি কোমল, মৃদু, অনন্ত প্রীতিপূর্ণ অভিমানে কাঁদিয়া ফেলিল। মনে মনে কহিল, “এত দিন পরে কি আমাকে মনে পড়িল?”

 রামমােহন অর থাকিতে পারিল না, তাহার চোখে জল আসিল, কহিল—“একি অলক্ষণ! মা-লক্ষ্মী তুমি হাসি মুখে আমাদের ঘরে এস। আজ শুভ দিনে চোখের জল মােছ!”

 মহিষীর মনে মনে ভয় ছিল, পাছে জামাই তাঁর মেয়েকে গ্রহণ না করে। রামমোহন বিভাকে লইতে আসিয়াছে শুনিয়া তাঁহার অত্যন্ত আনন্দ হইল। তিনি রামমোহনকে ডাকাইয়া জামাই-বাড়ির কুশল জিজ্ঞাসা করিলেন, বিশেষ যত্নে রামমােহনকে আহার করাইলেন, রামমােহনের গল্প শুনিলেন, আনন্দে দিন কাটিল! কাল যাত্রার দিন ভাল; কাল প্রভাতেই বিভাকে পাঠাইবেন স্থির হইল। প্রতাপাদিত্য এ বিষয়ে আর কিছু আপত্তি করিলেন না।

 যাত্রার যখন সমস্তই স্থির হইয়া গেছে, তখন বিভা একবার উদয়াদিত্যের কাছে গেল! উদয়াদিত্য একাকী বসিয়া কি একটা ভাবিতেছিলেন।

 বিভাকে দেখিয়া সহসা ঈষৎ চমকিত হইয়া কহিলেন, “বিভা, তবে তুই চলিলি? তা’ ভালই হইল! তুই সুখে থাকিতে পারিবি। আশীর্ব্বাদ করি—লক্ষ্মীস্বরূপা হইয়া স্বামীর ঘর উজ্জ্বল করিয়া থাক্!”