পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 রাজা অধীর হইয়া কহিলেন, “রামমােহন, শীঘ্র বল্।”

 রামমােহন যােড় হাতে কহিল—“মহারাজ—”

 রাজা কহিলেন—“কি বল্।”

 রামমােহন—“মহারাজ, মা-ঠাকরুণ আসিতে চাহিলেন না।” বলিয়া রামমােহনের চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল। বুঝি এ সন্তানের অভিমানের অশ্রু। বােধ করি এ অশ্রুজলের অর্থ—“মায়ের প্রতি আমার এত বিশ্বাস ছিল যে সেই বিশ্বাসের জোরে আমি বুক ফুলাইয়া, আনন্দ করিয়া মাকে আনিতে গেলাম, আর মা আসিলেন না; মা আমার সম্মান রাখিলেন না।” কি জানি কি মনে করিয়া বৃদ্ধ রামমােহন চোখের জল সামলাইতে পারিল না।

 রাজা কথাটা শুনিয়াই একেবারে দাঁড়াইয়া উঠিয়া চোখ পাকাইয়া বলিয়া উঠিলেন, “বটে—” অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাঁহার আর বাক্যস্ফূর্তি হইল না

 “আসিতে চাহিলেন না বটে! বেটা, তুই বেরো, বেরে আমার সুমুখ হইতে এখনি বেরো।”

 রামনােহন একটি কথা না কহিয়া বাহির হইয়া গেল! সে জানিত তাহারি সমস্ত দোষ, অতএব সমুচিত দণ্ড পাওয়া কিছু অন্যায় নহে।

 রাজা কি করিয়া যে ইহার শােধ তুলিবেন কিছুতেই ভাবিয়া পাইলেন না। প্রতাপাদিত্যের কিছু করিতে পারিবেন না, বিভাকেও হাতের কাছে পাইতেছেন না। রামচন্দ্র রায় অধীর হইয়া বেড়াইতে লাগিলেন।

 দিন দুয়েকের মধ্যে সংবাদটা নানা আকারে নানা দিকে রাষ্ট্র হইয়া পড়িল। এমন অবস্থা হইয়া দাঁড়াইল যে, প্রতিশােধ না লইলে আর মুখ রক্ষা হয় না। এমন কি, প্রজারা পর্য্যন্ত প্রতিশােধ লইবার জন্য ব্যস্ত হইল। তাহারা কহিল, “আমাদের মহারাজার অপমান!” অপমানটা যেন সকলের গায়ে লাগিয়াছে! একে ত প্রতিহিংসা-প্রবৃত্তি রামচন্দ্র রায়ের