বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
প্রথম পরিচ্ছেদ।
রাত্রি অনেক হইয়াছে। গ্রীষ্মকাল। বাতাস বন্ধ হইয়া গিয়াছে। গাছের পাতাটিও নড়িতেছে না। যশােহরের যুবরাজ, প্রতাপাদিত্যের জ্যেষ্ঠ পুত্র, উদয়াদিত্য তাঁহার শয়ন-গৃহের বাতায়নে বসিয়া আছেন। তাঁহার পার্শ্বে তাঁহার স্ত্রী সুরমা।
সুরমা কহিলেন, “প্রিয়তম, সহ্য করিয়া থাক, ধৈর্য্য ধরিয়া থাক। এক দিন সুখের দিন আসিবে।”
উদয়াদিত্য কহিলেন, “আমি ত আর কোন সুখ চাই না, আমি চাই, আমি রাজপ্রাসাদে না যদি জন্মাইতাম, যুবরাজ না যদি হইতাম, যশােহর-অধিপতির ক্ষুদ্রতম তুচ্ছতম প্রজার প্রজা হইতাম, তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র, তাঁহার সিংহাসনের তাঁহার সমস্ত ধন মান যশ প্রভাব গৌরবের একমাত্র উত্তরাধিকারী না হইতাম! কি তপস্যা করিলে এ সমস্ত অতীত উল্টাইয়া যাইতে পারে।”
সুরমা অতি কাতর হইয়া যুবরাজের দক্ষিণ হস্ত দুই হাতে লইয়া চাপিয়া ধরিলেন, ও তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া ধীরে ধীরে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিলেন। যুবরাজের ইচ্ছা পূরাইতে প্রাণ দিতে পারেন, কিন্তু প্রাণ দিলেও এ ইচ্ছা পূরাইতে পারিবেন না, এই দুঃখ।
যুবরাজ কহিলেন, “সুরমা, রাজার ঘরে জন্মিয়াছি বলিয়াই সুখী হইতে পারিলাম না। রাজার ঘরে সকলে বুঝি কেবল উত্তরাধিকারী