পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৪৫

আমিই শুধু রৈনু বাকি।
যা ছিল তা গেল চলে, রইল যা’ তা, কেবল ফাঁকি।
আমার ব’লে ছিল যারা,
আর ত তারা দেয় না সাড়া,
কোথায় তারা, কোথায় তারা? কেঁদে কেঁদে কারে ডাকি’।
বল্ দেখি মা, শুধাই তােরে,
“আমার” কিছু রাখলি নেরে?
আমি কেবল আমায় নিয়ে কোন্ প্রাণেতে বেঁচে থাকি।

 কে জানে কি ভাবিয়া বৃদ্ধ এই গান গাহিতে ছিলেন। বুঝি তাঁহার মনে হইতেছিল, গান গাহিতেছি, কিন্তু যাহাদের গান শুনাইতাম, তাহারা যে নাই। গান আপনি আসে, কিন্তু গান গাহিয়া যে আর সুখ নাই। এখনাে আনন্দ ভুলি নাই, কিন্তু যখনি আনন্দ জন্মিত, তখনি যাহাদের আলিঙ্গন করিতে সাধ যাইত, তাহারা কোথায়? যে দিন প্রভাতে রায়গড়ে ঐ তাল গাছটার উপরে মেঘ করিত, মনটা আনন্দে নাচিয়া উঠিত, সেই দিনই আমি যাহাদের দেখিতে যশােরে যাত্রা করিতাম, তাহাদের কি আর দেখিতে পাইব না? এখনাে এক একবার মনটা তেমনি আনন্দে নাচিয়া উঠে কিন্তু হা—এইসব বুঝি ভাবিয়া আজ বিকাল বেলায় অস্তমান সূর্য্যের দিকে চাহিয়া বৃদ্ধ বসন্তরায়ের মুখে আপনা আপনি গান উঠিয়াছে—“আমিই শুধু রৈনু বাকি।

 এমন সময়ে খাঁ সাহেব আসিয়া এক মস্ত সেলাম করিল। খাঁ সাহেবকে দেখিয়া বসন্তরায় উৎফুল্ল হইয়া কহিলেন—“খাঁ সাহেব, এস এস!” অধিকতর নিকটে গিয়া ব্যস্তসমস্ত হইয়া কহিলেন, “সাহেব তােমার মুখ অমন মলিন দেখিতেছি কেন? মেজাজ ভাল আছে ত?”

 খাঁ সাহেব—“মেজাজের কথা আর জিজ্ঞাসা করিবেন না, মহারাজ।