পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৮
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

করিয়া উঠিতে পারিতেছেন না। আবার কিছুক্ষণ বাদে সীতারামের হাত ধরিয়া কহিলেন—“সীতারাম!”

 সীতারাম—“আজ্ঞা মহারাজ!”

 বসন্তরায়—“তাহা হইলে দাদা এখন কি করিতেছে?”

 সীতারাম—“কি আর করিবেন! তিনি কারাগারেই আছেন।”

 বসন্তরায়—“তাঁহাকে কি সকলে বন্ধ করিয়া রাখিয়াছে?”

 সীতারাম—“আজ্ঞা হাঁ মহারাজ।”

 বসন্তরায়—“তাহাকে কি কেহ একবার বাহির হইতে দেয় না?”

 সীতারাম—“আজ্ঞা না।”

 বসন্তরায়—“সে একলা কারাগারে বসিয়া আছে?”

 বসন্তরায় একথাগুলি বিশেষ কোন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করেন নাই। আপনা-আপনি বলিতেছিলেন। সীতারাম তাহা বুঝিতে পারে নাই—সে উত্তর করিল—“হাঁ মহারাজ।”,

 বসন্তরায় বলিয়া উঠিলেন—“দাদা, তুই আমার কাছে আয়রে। তােকে কেহ চিনিল না।”

অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ।

 বসন্তরায় তাহার পর দিনই যশোহরে যাত্রা করিলেন, কাহারাে নিষেধ মানিলেন না। যশােহরে পৌঁছিয়াই একেবারে রাজবাটির অন্তঃপুরে গেলেন। বিভা সহসা তাহার দাদা মহাশয়কে দেখিয়া যেন কি হইয়া গেল। কিছুক্ষণ, কি যে করিবে কিছু যেন ভাবিয়া পাইল না। কেবল, চোখে বিস্ময়, অধরে আনন্দ, মুখে কথা নাই, শরীর নিস্পন্দ—খানিকটা দাঁড়াইয়া রহিল—তাহার পর তাঁহার পায়ের কাছে পড়িয়া প্রণাম করিল, পায়ের ধূলা মাথায় লইল। বিভা উঠিয়া দাঁড়াইলে পর বসন্তরায় একবার নিতান্ত একাগ্র দৃষ্টে বিভার মুখের দিকে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “বিভা?”