পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৫৩

জানে না তাহাকে ত মহারাজ—সে যেন রাজার মতই হয় নাই, কিন্তু তাহাকে ত আমি গর্ভে ধারণ করিয়াছিলাম, সে ত আমার আপনার সন্তান বটে। জানি না, বাছা সেখানে কি করিয়া থাকে, একবার আমাকে দেখিতেও দেয় না!” মহিষী আজ কাল যে যে কথাই পাড়েন, উদয়াদিত্যের কথা তাহার মধ্যে একস্থলে আসিয়া পড়ে। ঐ কষ্টটাই তাঁহার প্রাণের মধ্যে যেন দিনরাত জাগিয়া আছে।

 চিঠি পড়িয়া বসন্তরায় একেবারে অবাক্ হইয়া গেলেন—চুপ করিয়া বসিয়া মাথায় হাত বুলাইতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে বসন্তরায় মহিষীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “চিঠি ত কাহাকেও দেখাও নি মা?”

 মহিষী কহিলেন, “মহারাজ এ চিঠির কথা শুনিলে কি আর রক্ষা রাখিবেন, বিভাও কি তাহা হইলে আর বাঁচিবে!”

 বসন্তরায় কহিলেন, “ভাল করিয়াছ। এ চিঠি আর কাহাকেও দেখাইও না বউ মা। তুমি বিভাকে শীঘ্র তাহার শ্বশুর বাড়ি পাঠাইয়া দাও। মান অপমানের কথা ভাবিও না!”

 মহিষী কহিলেন—“আমিও তাহাই মনে করিয়াছি। মান লইয়া আমার কাজ নাই, আমার বিভা সুখী হইলেই হইল। কেবল ভয় হয় পাছে বিভাকে তাহারা অযত্ন করে।”

 বসন্তরায় কহিলেন,—“বিভাকে অযত্ন করিবে! বিভা কি অযত্নের ধন! বিভা যেখানে যাইবে সেই খানেই আদর পাইবে। অমন লক্ষ্মী অমন সােনার প্রতিমা আর কোথায় আছে! রামচন্দ্র কেবল তােমাদের উপর রাগ করিয়াই এই চিঠি লিখিয়াছে, আবার পাঠাইয়া দিলেই তাহার রাগ পড়িয়া যাইবে!” বসন্তরায় তাঁহার সরল হৃদয়ে সরল বুদ্ধিতে এই বুঝিলেন। মহিষীও তাহাই বুঝিলেন!

 বসন্তরায় কহিলেন “বাড়িতে রাষ্ট্র করিয়া দাও যে বিভাকে চন্দ্রদ্বীপে