পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

পড়িয়াছেন, তখনি বুঝা যাইতেছে উহার দ্বারা রাজ্যশাসন কখনো ঘটিতে পারিবে না। সেই অবধি মহারাজ আমার পানে আর বড় একটা তাকাইতেন না। বলিতেন—ও কুলাঙ্গার ঠিক রায়গড়ের খুড়া বসন্তরায়ের মত হইবে, সেতার বাজাইয়া নাচিয়া বেড়াইবে ও রাজ্য অধঃপাতে দিবে।”

 সুরমা আবার কহিলেন, “প্রিয়তম, সহ্য করিয়া থাক, ধৈর্য্য ধরিয়া থাক। হাজার হউন, পিতা ত বটেন। আজ কাল রাজ্য-উপার্জ্জন, রাজ্য-বৃদ্ধির একমাত্র দুরাশায় তাঁহার সমস্ত হৃদয় পূর্ণ রহিয়াছে, সেখানে, স্নেহের ঠাঁই নাই। যতই তাঁহার আশা পূর্ণ হইতে থাকিবে, ততই তাঁহার স্নেহের রাজ্য বাড়িতে থাকিবে।”

 যুবরাজ কহিলেন “সুরমা, তােমার বুদ্ধি তীক্ষ্ণ, দুরদর্শী, কিন্তু এইবারে তুমি ভুল বুঝিয়াছ। একত, আশার শেষ নাই; দ্বিতীয়তঃ, পিতার রাজ্যের সীমা যতই বাড়িতে থাকিবে, রাজ্য যতই লাভ করিতে থাকিবেন, ততই তাহা হারাইবার ভয় তাঁহার মনে বাড়িতে থাকিবে; রাজ-কার্য্য যতই গুরুতর হইয়া উঠিবে, ততই আমাকে তাহার অনুপযুক্ত মনে করিবেন।”

 সুরমা ভুল বুঝে নাই, ভুল বিশ্বাস করিল মাত্র; বিশ্বাস বুদ্ধিকেও লঙ্ঘন করে। সে একমনে আশা করিত, এই রূপই যেন হয়।

 “চারিদিকে কোথাও বা কৃপাদৃষ্টি কোথাও বা অবহেলা সহ্য করিতে না পারিয়া আমি মাঝে মাঝে পালাইয়া রায়গড়ে দাদা মহাশয়ের কাছে যাইতাম! পিতা বড় একটা খোঁজ লইতেন না। আঃ, সে কি পরিবর্ত্তন। সেখানে গাছ পালা দেখিতে পাইতাম, গ্রামবাসীদের কুটিরে যাইতে পাইতাম, দিবানিশি রাজবেশ পরিয়া থাকিতে হইত না। তাহা ছাড়া জান ত, যেখানে দাদামহাশয় থাকেন, তাহার ত্রিসীমায় বিষাদ ভাবনা বা কঠোর, গাম্ভীর্য্য তিষ্ঠিতে পারে না। গাহিয়া বাজাইয়া,