পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৬৩

হইয়া গিয়াছেন; দাঁড়িগণ উভয়কে ধরিয়া নৌকায় তুলিয়া তৎক্ষণাৎ নৌকা ছাড়িয়া দিল। সীতারাম ভীত হইয়া কহিল, “যাত্রার সময় কি অমঙ্গল!”

একত্রিংশ পরিচ্ছেদ।

 উদয়াদিত্যের নৌকা খাল অতিক্রম করিয়া নদীতে গিয়া পৌঁছিল, তখন সীতারাম নৌকা হইতে নামিয়া সহরে ফিরিয়া আসিল। আসিবার সময় যুবরাজের নিকট হইতে তাঁহার তলােয়ারটি চাহিয়া লইল।

 উদয়াদিত্যের তিনখানি পত্র একটি লােকের হাত দিয়া সীতারাম প্রাসাদে প্রেরণ করিয়াছিল বটে, কিন্তু সে চিঠি কয়খানি কাহারাে হাতে দিতে তাহাকে গােপনে বিশেষরূপে নিষেধ করিয়াছিল। নৌকা হইতে প্রাসাদে ফিরিয়া আসিয়া সীতারাম সেই চিঠি কয়খানি ফিরাইয়া লইল। কেবল মহিষী ও বিভার চিঠিখানি রাখিয়া বাকি পত্রখানি নষ্ট করিয়া ফেলিল।

 তখন আগুন আরাে ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছে। রাত্রে শয্যা হইতে উঠিয়া কৌতুক দেখিবার জন্য অনেক লোক জড় হইয়াছে। তাহাতে নির্ব্বাণের ব্যাঘাত হইতেছে বই সুবিধা হইতেছে না।

 এই অগ্নিকাণ্ডে যে সীতারামের হাত ছিল, তাহা বলাই বাহুল্য। উদয়াদিত্যের প্রতি আসক্ত কয়েকজন প্রজা ও প্রাসাদের ভৃত্যের সাহায্য সে এই কীর্ত্তি করিয়াছে। সন্ধ্যাবেলায় একেবারে পাঁচ ছয়টা ঘরে যে বিনা কারণে আগুন ধরিয়া উঠিল, ইহা তখন দৈবের কর্ম্ম নহে, এতক্ষণ এত চেষ্টা করিয়া আগুন নিবিয়াও যে নিবিতেছে না, তাহারাে কারণ আছে। যাহারা আগুন নিবাইতে যােগ দিয়াছে, তাহাদের মধ্যেই দুই এক জন করিয়া সীতারামের লােক আছে। যেখানে আগুন নাই তাহারা সেইখানে জল ঢালে, জল আনিতে গিয়া আনে না, কৌশলে কলসী ভাঙিয়া