পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৪
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

ফেলে, গোলমাল করিয়া এ ওর ঘাড়ের উপর গিয়া পড়ে। আগুন আর নেবে না।

 এদিকে যখন এইরূপে গোলযোগ চলিতেছে, তখন সীতারামের দলস্থ লোকেরা উদয়াদিত্যের শূন্য কারাগারে আগুন লাগাইয়া দিল। একে একে জানালা দরজা, কড়ি, বরগা, চৌকাঠ, কাঠের বেড়া প্রভৃতিতে আগুন ধরাইয়া ছিল। সেই কারাগৃহে যে, কোন সূত্রে আগুন ধরিতে পারে, ইহা সকলের স্বপ্নেরও অগোচর, সুতরাং সে দিকে আর কাহারো মনোযোগ পড়ে নাই। সীতারাম ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, আগুন বেশ রীতিমত ধরিয়াছে। কতকগুলা হাড় মড়ার মাথা, ও উদয়াদিত্যের তলোয়ারটি সীতারাম কোন প্রকারে উদয়াদিত্যের সেই ঘরের মধ্যে ফেলিয়া দিল।

 এদিকে যাহারা প্রহরী-শালার আগুন নিভাইতেছিল, কারাগারের দিক হইতে সহসা তাহারা এক চীৎকার শুনিতে পাইল। সকলে চমকিয়া একবাক্যে বলিয়া উঠিল—“ও কি রে!” একজন ছুটিয়া আসিয়া কহিল—“ওরে, যুবরাজের ঘরে আগুন ধরিয়াছে!” প্রহরীদের রক্ত জল হইয়া গেল, দয়াল সিংহের মাথা ঘুরিয়া গেল। কলসী হাত হইতে পড়িয়া গেল, জিনিষ পত্র ভূমিতে ফেলিয়া দিল। এমন সময়ে আর এক জন, সেই দিক হইতে ছুটিয়া আসিয়া কহিল;—“কারাগৃহের মধ্য হইতে যুবরাজ চীৎকার করিতেছেন শুনা গেল!”—তাহার কথা শেষ না হইতে হইতেই সীতারাম ছুটিয়া আসিয়া কহিল—“ওরে তোরা শীঘ্র আয়! যুবরাজের ঘরের ছাদ ভাঙিয়া পড়িয়াছে, আর ত তাঁহার সাড়া পাওয়া যাইতেছে না।” যুবরাজের কারাগৃহের দিকে সকলে ছুটিল। গিয়া দেখিল গৃহ ভাঙিয়া পড়িয়াছে—চারিদিকে আগুন—ঘরে প্রবেশ করিবার উপায় নাই। তখন সেই খানে দাঁড়াইয়া পরস্পর পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করিতে লাগিল। কাহার অসাবধানতায় এই ঘটনাটি ঘটিল, সকলেই তাহা স্থির করিতে