পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৬৫

প্রবৃত্ত হইল। ঘােরতর বিবাদ বাধিয়া উঠিল, পরস্পর পরস্পকে গালাগালি দিতে লাগিল, এমন কি, মারামারি হইবার উপক্রম হইল।

 সীতারাম ভাবিল, গৃহদাহে যুবরাজের মৃত্যু হইয়াছে, এই সংবাদ রাষ্ট্র করিয়া আপাতত কিছু দিন নিশ্চিন্ত থাকিতে পারিব। যখন সে দেখিল, ঘরে বেশ করিয়া আগুন লাগিয়াছে, তখন সে মাথায় চাদর বাঁধিয়া আনন্দ মনে তাহার কুটীরাভিমুখে চলিল; প্রাসাদ হইতে অনেক দূরে আসিল। তখন রাত্রি অনেক, পথে লােক নাই, চারিদিকে স্তব্ধ-বাঁশগাছের পাতা ঝর্ ঝর্ করিয়া মাঝে মাঝে দক্ষিণা বাতাস বহিতেছে;— সীতারামের সৌখীন প্রাণ উল্লাসিত হইয়া উঠিয়াছে, সে একটি রস-গর্ভ গান ধরিয়াছে। সেই জনশূন্য স্তব্ধ পথ দিয়া একাকী পান্থ মনের উল্লাসে গান গাহিতে গাহিতে চলিল। কিছু দূর গিয়া তাহার মনের মধ্যে এক ভাবনা উপস্থিত হইল। সে ভাবিল, যশোহর হইতে ত সপরিবার পালাইতেই হইবে, অমনি বিনা মেহনতে কিঞ্চিৎ টাকার সংস্থান করিয়া লওয়া যাক্ না। মঙ্গলা পােড়ামুখী ত মরিয়াছে—বালাই গিয়াছে—একবার তাহার বাড়ি হইয়া যাওয়া যাক্— বেটির টাকা আছে ঢের—তাহার ত্রিসংসারে কেহই নাই—সে টাকা আমি না লই ত আর একজন লইবে,—তায় কাজ কি, একবার চেষ্টা করিয়া দেখা যাক্! এইরূপ সাত পাঁচ ভাবিয়া সীতারাম রুক্মিণীর বাড়ির মুখে চলিল—প্রফুল্ল মনে আবার গান ধরিল। যাইতে যাইতে পথে একজন অভিসারিণীকে দেখিতে পাইল। সীতারামের নজরে এ সকল কিছুই এড়াইতে পায় না। দুইটা রসিকতা করিবার জন্য তাহার মনে অনিবার্য আবেগ উপস্থিত হইল—কিন্তু সময় নাই দেখিয়া সে আবেগ দমন করিয়া হন্ হন্ করিয়া চলিল।

 সীতারাম রুক্মিণীর কুটীরের নিকটে গিয়া দেখিল, দ্বার খােলাই আছে। হৃষ্টচিত্তে কুটীরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া একবার চারিদিকে নিরীক্ষণ করিল। ঘােরতর অন্ধকার, কিছুই দেখা যাইতেছে না। এক