পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৬৯

না। কেহ কহিল—“যখন আগুন লাগিয়াছিল, তখন তিনিও কারাগারে ছিলেন।” কেহ কহিল—“না, রাত্রেই তিনি সংবাদ পাইয়াছিলেন যে, গৃহদাহে যুবরাজের মৃত্যু হইয়াছে ও তাহা শুনিয়াই তিনি তৎক্ষণাৎ যশাের ত্যাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছেন।” প্রতাপাদিত্য এইরূপে যখন সভায় বসিয়া সকলের সাক্ষ্য শুনিতেছেন, এমন সময়ে গৃহদ্বারে এক কলরব উঠিল। একজন স্ত্রীলােক ঘরে প্রবেশ করিতে চায়, কিন্তু প্রহরীরা তাহাকে নিষেধ করিতেছে। শুনিয়া প্রতাপাদিত্য তাহাকে ঘরে লইয়া আসিতে আদেশ করিলেন। একজন প্রহরী রুক্মিণীকে সঙ্গে করিয়া আনিল। রাজা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন—“তুমি কি চাও?” সে হাত নাড়িয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিল, “আমি আর কিছু চাই না—তােমার ঐ প্রহরীদিগকে, সকলকে একে একে ছয় মাস গারদে পচাইয়া ডালকুত্তা দিয়া খাওয়াও এই আমি দেখিতে চাই। ওরা কি তােমাকে মানে, না তােমাকে ভয় করে!” এই কথা শুনিয়া প্রহরীরা চারিদিক্ হইতে গােল করিয়া উঠিল। রুক্মিণী পিছন ফিরিয়া চোখ পাকাইয়া তীব্র এক ধমক দিয়া কহিল, “চুপ কর মিন্সেরা। কাল যখন তোদের হাতে পায় ধরিয়া, পই পই করিয়া বলিলাম—ওগো তােমাদের যুবরাজ তােমাদের রায়গড়ের বুড় রাজার সঙ্গে পালায়—তখন যে তােরা পােড়রমুখােরা আমার কথায় কান দিলে নে? রাজার বাড়ি চাক্‌রি কর, তােমাদের বড় অহঙ্কার হইয়াছে, তোমরা সাপের পাঁচ পা দেখিয়াছ! পিপড়ের পাখা উঠে মরিবার তরে!”

 প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “যাহা যাহা ঘটিয়াছে সমস্ত বল।”

 রুক্মিণী কহিল, “বলিব আর কি! তােমাদের যুবরাজ কাল রাত্রে বুড় রাজার সঙ্গে পালাইয়াছে।”

 প্রতাপাদিত্য জিজ্ঞাসা করিলেন, “ঘরে কে আগুন দিয়াছে জান?”

 রুক্মিণী কহিল—“আমি আর জানি না! সেই যে তােমাদের সীতারাম। তােমাদের যুবরাজের সঙ্গে যে তার বড় পীরিত—আর কেউ যেন তাঁর