পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট।

কেউ নয় সীতারামই যেন তাঁর সব। এ সমস্ত সেই সীতাৱামের কাজ। বুড়া রাজা, সীতারাম, আর তােমাদের যুবরাজ, এই তিন জনে মিলিয়া পরামর্শ করিয়া ইহা করিয়াছে—এই তোমাকে স্পষ্ট বলিলাম!”

 প্রতাপাদিত্য অনেকক্ষণ ধরিয়া স্তব্ধ হইয়া রহিলেন! জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি এসব কি করিয়া জানিতে পারিলে?” রুক্মিণী কহিল— “সে কথায় কাজ কি গা! আমার সঙ্গে লােক দাও, আমি স্বয়ং গিয়া তাহাদের খুঁজিয়া বাহির করিয়া দিব। তােমার রাজবাড়ির চাকররা সব ভেড়া—উহারা এ কাজ করিবে না।”

 প্রতাপাদিত্য রুক্মিণীর সহিত লােক দিতে আদেশ করিলেন ও প্রহরীদিগের প্রতি যথাবিহিত শাস্তির বিধান করিলেন। একে একে সভাগৃহ শূন্য হইয়া গেল। কেবল মন্ত্রী ও মহারাজ অবশিষ্ট রহিলেন। মন্ত্রী মনে করিলেন, মহারাজ অবশ্য তাঁহাকে কিছু বলিবেন। কিন্তু প্রতাপাদিত্য কিছুই বলিলেন না, স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিলেন। মন্ত্রী একবার কি বলিবার অভিপ্রায়ে অতি ধীরস্বরে কহিলেন “মহারাজ!” মহারাজ তাহার কোন উত্তর করিলেন না। মন্ত্রী ধীরে ধীরে উঠিয়া গেলেন।

 সেই দিনই সন্ধ্যার পূর্ব্বে প্রতাপাদিত্য একজন জেলের মুখে উদয়াদিত্যের পলায়ন সংবাদ পাইলেন। নৌকা করিয়া নদী বাহিয়া উদয়াদিত্য চলিয়াছিলেন সে তাঁহাকে দেখিয়াছিল। ক্রমে ক্রমে অন্যান্য নানা লােকের মুখ হইতে সংবাদ পাইতে লাগিলেন। রুক্মিণীর সহিত যে লোকেরা গিয়াছিল, তাহারা এক সপ্তাহ পরে ফিরিয়া আসিয়া কহিল—যুবরাজকে রায়গড়ে দেখিয়া আসিলাম। রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, “সেই স্ত্রীলােকটি কোথায়?” তাহারা কহিল, “সে আর ফিরিয়া আসিল না, সে সেইখানেই রহিল।”

 তখন প্রতাপাদিত্য মুক্তিয়ার খাঁ নামক তাঁহার এক পাঠান