পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৮
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 বসন্তরায় উদয়াদিত্যের গলা ধরিয়া কহিলেন, “কেন ভাই, কেন ছাড়াছাড়ি হইবে? তুই আমাকে ছাড়িয়া যাস্‌নে। এ বুড়া বয়সে তুই আমাকে ফেলিয়া পালাস্‌নে ভাই!”

 উদয়াদিত্যের চোখে জল আসিল। তিনি বিস্মিত হইলেন;—তাঁহার মনের অভিসন্ধি যেন বসন্তরায় কি করিয়া টের পাইয়াছেন। নিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, “আমি কাছে থাকিলেই যে তােমার বিপদ ঘটিবে দাদা মহাশয়!”

 বসন্তরায় হাসিয়া কহিলেন—“কিসের বিপদ ভাই? এ বয়সে কি আর বিপদকে ভয় করি! মরণের বাড়া ত আর বিপদ নাই! তা, মরণ যে আমার প্রতিবেশী; সে নিত্য আমার তত্ত্ব লইতে পাঠায়, তাহাকে আমি ভয় করি না। যে ব্যক্তি জীবনের সমস্ত বিপদ অতিক্রম করিয়া বুড়া বয়স পর্য্যন্ত বাঁচিয়া থাকিতে পারে, তীরে আসিয়া তাহার নৌকাডুবি হইলই বা?”

 উদয়াদিত্য আজ সমস্ত দিন বসন্তরায়ের সঙ্গে সঙ্গে রহিলেন। সমস্ত দিন টিপ্ টিপ্ করিয়া বৃষ্টি পড়িতে লাগিল।

 বিকালবেলায় বৃষ্টি ধরিয়া গেল, উদয়াদিত্য উঠিলেন। বসন্তরায় কহিলেন—“দাদা, কোথায় যাস্!”

 উদয়াদিত্য কহিলেন—“একটু বেড়াইয়া আসি!”

 বসন্তরায় কহিলেন—“আজ নাই বা গেলি।”

 উদয়াদিত্য কহিলেন—“কেন, দাদা মহাশয়?”

 বসন্তরায়: উদয়াদিত্যকে জড়াইয়া ধরিয়া কহিলেন, “আজ তুই বাড়ি হইতে বাহির হ’স্ নে, আজ তুই আমার কাছে থাক ভাই!”

 উদয়াদিত্য কহিলেন, “আমি অধিক দূর যাব না দাদা মহাশয়, এখনি ফিরিয়া আসিব।” বলিয়া বাহির হইয়া গেলেন।