পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮২
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 মুক্তিয়ার নিরুত্তরে দাঁড়াইয়া রহিল।

 যুবরাজের মুখ পাংশুবর্ণ হইয়া গেল, তাঁহার কপালে ঘর্ম্মবিন্দু দেখা দিল। তিনি সেনাপতির হাত দৃঢ়ভাবে ধরিয়া কহিলেন—“মুক্তিয়ার খাঁ, বৃদ্ধ, নিরপরাধ, পুণ্যাত্মাকে বধ করিলে নরকেও তােমার স্থান হইবে না!”

 মুক্তিয়ার খাঁ কহিল—“মনিবের আদেশ পালন করিতে পাপ নাই।”

 উদয়াদিত্য উচ্চৈঃস্বরে কহিয়া উঠিলেন “মিথ্যা কথা। যে ধর্ম্মশাস্ত্রে তাহা বলে, সে ধর্ম্মশাস্ত্র মিথ্যা। নিশ্চয় জানিও মুক্তিয়ার, পাপ আদেশ পালন করিলে পাপ।”

 মুক্তিয়ার নিরুত্তরে দাঁড়াইয়া রহিল।

 উদয়াদিত্য চারি দিকে চাহিয়া বলিয়া উঠিলেন, “তবে আমাকে ছাড়িয়া দাও। আমি গড়ে ফিরিয়া যাই। তােমার সৈন্যসামন্ত লইয়া সেখানে যাও—আমি তােমাকে যুদ্ধে আহ্বান করিতেছি। সেখানে রণক্ষেত্রে জয়লাভ করিয়া তার পরে তােমার আদেশ পালন করিও!”

 মুক্তিয়ার নিরুত্তরে দাঁড়াইয়া রহিল। সৈন্যগণ অধিকতর ঘেঁসিয়া আসিয়া যুবরাজকে ঘিরিল। যুবরাজ কোন উপায় না দেখিয়া সেই অন্ধকারে প্রাণপণে চীৎকার করিয়া উঠিলেন “দাদা মহাশয়, সাবধান!” বন কাঁপিয়া উঠিল—মাঠের প্রান্তে গিয়া সে সুর মিলাইয়া গেল। সৈন্যরা আসিয়া উদয়াদিত্যকে ধরিল। উদয়াদিত্য আর একবার চীৎকার করিয়া উঠিলেন—“দাদা মহাশয়, সাবধান!” একজন পথিক মাঠ দিয়া যাইতেছিল —শব্দ শুনিয়া কাছে আসিয়া কহিল “কে গাে!” উদয়াদিত্য তাড়াতাড়ি কহিলেন—“যাও যাও—গড়ে ছুটিয়া যাও—মহারাজকে সাবধান করিয়া দাও,” দেখিতে দেখিতে সেই পথিককে সৈন্যেরা গ্রেফ্‌তার করিল। যে কেহ সেই মাঠ দিয়া চলিয়াছিল—সৈন্যেরা অবিলম্বে তাহাকে বন্দী করিল।

 কয়েক জন সৈন্য উদয়াদিত্যকে বন্দী করিয়া রহিল, মুক্তিয়ার খাঁ এবং অবশিষ্ট সৈন্যগণ সৈনিকের বেশ পরিত্যাগ করিয়া অস্ত্র শস্ত্র লুকাইয়া সহজ