পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৮৩

বেশে গড়ের অভিমুখে গেল। রায়গড়ের শতাধিক দ্বার ছিল, ভিন্ন ভিন্ন দ্বার দিয়া তাহারা গড়ের মধ্যে প্রবেশ করিল।

 তখন সন্ধ্যাকালে বসন্তরায় বসিয়া আহ্নিক করিতেছিলেন। ওদিকে রাজবাড়ির ঠাকুর-ঘরে সন্ধ্যাপূজার শাঁক ঘণ্টা বাজিতেছে। বৃহৎ রাজবাটিতে কোন কোলাহল নাই, চারিদিক নিস্তব্ধ। বসন্তরায়ের নিয়মানুসারে অধিকাংশ ভৃত্য সন্ধ্যাবেলায় কিছুক্ষণের জন্য ছুটি পাইয়াছে।

 আহ্নিক করিতে করিতে বসন্তরায় সহসা দেখিলেন, তাঁহার ঘরের মধ্যে মুক্তিয়ার খাঁ প্রবেশ করিল। ব্যস্তসমস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন—“খাঁ সাহেব, এ ঘরে প্রবেশ করিও না। আমি এখনি আহ্নিক সারিয়া আসিতেছি

 মুক্তিয়ার খাঁ ঘরের বাহিরে গিয়া দুয়ারের নিকট দাঁড়াইয়া রহিল। বসন্তরায় আহ্নিক সমাপন করিয়া তাড়াতাড়ি বাহিরে আসিয়া মুক্তিয়ার খাঁর গায়ে হাত দিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “খাঁ সাহেব, ভাল আছ ত?”

 মুক্তিয়ার সেলাম করিয়া সংক্ষেপে কহিল, “হাঁ মহারাজ!”

 বসন্তরায় কহিলেন—“আহারাদি হইয়াছে?”

 মুক্তিয়ার—“আজ্ঞা হাঁ।”

 বসন্তরায়—“আজ তবে, তোমার এখানে থাকিবার বন্দোবস্ত করিয়া দিই।”

 মুক্তিয়ার কহিল—“আজ্ঞা না, প্রয়োজন নাই। কাজ সারিয়া এখনি যাইতে হইবে!”

 বসন্তরায়—“না, তা হইবে না খাঁ সাহেব, আজ তোমাদের ছাড়িব না, আজ এখানে থাকিতেই হইবে।”

 মুক্তিয়ার—“না, মহারাজ শীঘ্রই যাইতে হইবে।”

 বসন্তরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন বল দেখি? বিশেষ কাজ আছে বুঝি? প্রতাপ ভাল আছে ত?”