পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 মুক্তিয়ার—“মহারাজ ভাল আছেন।”

 বসন্তরায়—“তবে, কি তােমার কাজ, শীঘ্র বল। বিশেষ জরুরি শুনিয়া উদ্বেগ হইতেছে। প্রতাপের ত কোন বিপদ ঘটে নাই।”

 মুক্তিয়ার—“আজ্ঞা না, তাঁহার কোন বিপদ ঘটে নাই। মহারাজার একটি আদেশ পালন করিতে আসিয়াছি!”

 বসন্তরায় তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করিলেন,“কি আদেশ—এখনি বল!”

 মুক্তিয়ার খাঁ এক আদেশপত্র বাহির করিয়া বসন্তরায়ের হাতে দিল। বসন্তরায় আলাের কাছে লইয়া পড়িতে লাগিলেন। ইতিমধ্যে একে একে সমুদয় সৈন্য দরজার নিকট আসিয়া ঘেরিয়া দাঁড়াইল।

 পড়া শেষ করিয়া বসন্তরায় ধীরে ধীরে মুক্তিয়ার খাঁর নিকট আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন—“এ কি প্রতাপের লেখা?”

 মুক্তিয়ার কহিল, “হাঁ।”

 বসন্তরায় আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “খাঁ সাহেব, এ কি প্রতাপের স্বহস্তে লেখা?”

 মুক্তিয়ার কহিল—“হাঁ মহারাজ!”

 তখন বসন্তরায় কাঁদিয়া বলিয়া উঠিলেন, “খাঁ সাহেব, আমি প্রতাপকে নিজের হাতে মানুষ করিয়াছি!”

 কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন—অবশেষে আবার কহিলেন, “প্রতাপ যখন এতটুকু ছিল আমি তাহাকে দিনরাত কোলে করিয়া থাকিতাম—সে আমাকে এক মুহূর্ত্ত ছাড়িয়া থাকিতে চাহিত না! সেই প্রতাপ বড় হইল, তাহার বিবাহ দিয়া দিলাম, তাহাকে সিংহাসনে বসাইলাম—তাহার সন্তানদের কোলে লইলাম—সেই প্রতাপ আজ স্বহস্তে এই লেখা লিখিয়াছে খাঁ সাহেব?”

 মুক্তিয়ার খাঁর চোখের পাতা ভিজিয়া আসিল, সে অধোবদনে চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল।