পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৬
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

আসিল। মুক্তিয়ার মুখ ফিরাইয়া সরিয়া গেল। মুহূর্ত্ত পরেই রক্তাক্ত অসি হস্তে আবদুল গৃহ হইতে বাহির হইয়া আসিল—গৃহে রক্তস্রোত বহিতে লাগিল!

চতুস্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ।

 মুক্তিয়ার খাঁ ফিরিয়া আসিল। রায়গড়ে অধিকাংশ সৈন্য রাখিয়া উদয়াদিত্যকে লইয়া তৎক্ষণাৎ যশােহরে যাত্রা করিল। পথে যাইতে দুই দিন উদয়াদিত্য খাদ্য দ্রব্য স্পর্শ করিলেন না—কাহারো সহিত একটি কথাও কহিলেন না—কেবল চুপ করিয়া ভাবিতে লাগিলেন। পাষাণমূর্ত্তির ন্যায় স্থির—তাঁহার নেত্রে নিদ্রা নাই, নিমেষ নাই, অশ্রু নাই, দৃষ্টি নাই —কেবলি ভাবিতেছেন। নৌকায় উঠিলেন—নৌকা হইতে মুখ বাড়াইয়া জলের দিকে চাহিয়া রহিলেন, নৌকা চলিতে লাগিল—দাঁড়ের শব্দ শুনিতে লাগিলেন, জলের কল্লোল কানে প্রবেশ করিল তবুও কিছুই শুনিলেন না, কিছুই দেখিলেন না, কেবলি ভাবিতে লাগিলেন। রাত্রি হইল, আকাশে তারা উঠিল, মাঝিরা নৌকা বাঁধিয়া রাখিল, নৌকায় সকলেই ঘুমাইল কেবল জলের শব্দ শুনা যাইতেছে, নৌকার উপর ছােট ছােট তরঙ্গ আসিয়া আঘাত করিতেছে—যুবরাজ এক দৃষ্টে সম্মুখে চাহিয়া— সুদূর প্রসারিত শুভ্র বালির চড়ার দিকে চাহিয়া কেবলি ভাবিতে লাগিলেন। প্রত্যুষে মাঝিরা জাগিয়া উঠিল—নৌকা খুলিয়া দিল— ঊষার বাতাস বহিল—পূর্ব্বদিক রাঙা হইয়া উঠিল, যুবরাজ, ভাবিতে লাগিলেন। তৃতীয় দিবসে যুবরাজের দুই চক্ষু ভাসিয়া হুহু করিয়া অশ্রু পড়িতে লাগিল—হাতের উপর মাথা রাখিয়া জলের দিকে চাহিয়া রহিলেন —আকাশের দিকে চাহিয়া রহিলেন। নৌকা চলিতে লাগিল—তীরে গাছপালাগুলি মেঘের মত চোখের উপর দিয়া চলিয়া যাইতে লাগিল, চোখ দিয়া সহস্রধারায় অশ্রু পড়িতে লাগিল। অনেক ক্ষণের পর