পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৮৯

উদয়াদিত্যের কাছে আসিয়া কহিলেন, “বাবা উদয়, আমাকেও তাের সঙ্গে লইয়া চল।”

 উদয়াদিত্য কহিলেন, “সে কি কথা মা! তোমার সমরাদিত্য আছে, তােমার সমস্ত সংসার এখানে রহিল, তুমি যদি এখান হইতে যাও, তবে যশােরে রাজলক্ষ্মী থাকিবে না।”

 মহিষী কাঁদিয়া কহিলেন, “বাছা, এই বয়সে তুই যদি সংসার ছাড়িয়া গেলি, আমি কোন্ প্রাণে সংসার লইয়া থাকিব? রাজ্য, সংসার পরিত্যাগ করিয়া তুই সন্ন্যাসী হইয়া থাকিবি—তােকে সেখানে কে দেখিবে? তাের পিতা পাষাণ বলিয়া আমি তােকে ছাড়িতে পারিব না!” মহিষী তাঁহার সকল সন্তানের মধ্যে উদয়াদিত্যকে অধিক ভাল বাসিতেন, উদয়াদিত্যের জন্য তিনি বুক ফাটিয়া কাঁদিতে লাগিলেন।

 উদয়াদিত্য মায়ের হাত ধরিয়া অশ্রুনেত্রে কহিলেন, “মা, তুমি ত জানই রাজবাড়িতে থাকিলে আমার পদে পদে আশঙ্কার কারণ থাকিবে— তুমি নিশ্চিন্ত হও মা, আমি বিশ্বেশ্বরের চরণে গিয়া নিরাপদ হই।”

 উদয়াদিত্য বিভার কাছে গিয়া কহিলেন, “বিভা, দিদি আমার, কাশী যাইবার আগে তােকে আমি সুখী করিয়া যাইব। আমি নিজে সঙ্গে করিয়া তােকে শ্বশুরবাড়ি লইয়া যাইব, এই আমার একমাত্র সাধ আছে!”

 বিভা উদয়াদিত্যকে জিজ্ঞাসা করিল, “দাদা, দাদামহাশয় কেমন আছেন?”

 “দাদা মহাশয় ভাল আছেন।” বলিয়াই উদয়াদিত্য তাড়াতাড়ি সেখান হইতে চলিয়া গেলেন।