পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯০
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ।

 উদয়াদিত্য ও বিভার যাত্রার উদ্যোগ হইতে লাগিল। বিভা মায়ের গলা ধরিয়া কাঁদিল। অন্তঃপুরে যে যেখানে ছিল, শ্বশুরালয়ে যাইবার আগে সকলেই বিভাকে নানা প্রকার সদুপদেশ দিতে লাগিল।

 মহিষী একবার উদয়াদিত্যকে ডাকিয়া পাঠাইলেন—কহিলেন, “বাবা, বিভাকে ত লইয়া যাইতেছে, যদি তাহারা অযত্ন করে!”

 উদয়াদিত্য চমকিয়া উঠিয়া কহিলেন, “কেন মা, তাহারা অযত্ন করিবে কেন?”

 মহিষী কহিলেন, “কি জানি তাহারা যদি বিভার উপর রাগ করিয়া থাকে!”

 উদয়াদিত্য কহিলেন—“না, মা, বিভা ছেলেমানুষ, বিভার উপর কি তাহারা কখন রাগ করিতে পারে?”

 মহিষী কাঁদিয়া কহিলেন—“বাছা, সাবধানে লইয়া যাইও, যদি তাহারা অনাদর করে, তবে আর বিভা বাঁচিবে না!”

 উদয়াদিত্যের মনে একটা আশঙ্কা জাগিয়া উঠিল। বিভাকে যে শ্বশুরালয়ে অনাদর করিতে পারে, আগে তাহা তাঁহার মনেই হয় নাই। উদয়াদিত্য মনে করিয়াছিলেন, তাঁহার কর্ম্মফল সমস্তই বুঝি শেষ হইয়া গিয়াছে—দেখিলেন এখনাে শেষ হয় নাই। বিভাকে তিনি আশ্রয় করিয়াছেন, তাহার পরিণামস্বরূপে বিভার অদৃষ্টে কি আছে তা’ কে জানে!

 যাত্রার সময় উদয়াদিত্য ও বিভা মাকে আসিয়া প্রণাম করিলেন— পাছে যাত্রার বিঘ্ন হয়, মহিষী তখন কাঁদিলেন না, তাঁহারা চলিয়া যাইতেই তিনি ভূমে লুটাইয়া পড়িয়া কাঁদিতে লাগিলেন। উদয়াদিত্য ও বিভা পিতাকে প্রণাম করিয়া আসিলেন, বাড়ির অন্যান্য গুরুজনদের প্রণাম