পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৯৫

 মোহন কহিল—“মার্জ্জনা আর করিলেন কই?”

 বিভা কহিল—“মোহন, আমি কেবল একবার তাঁহাকে দেখিতে যাইব।” বলিয়া ঊর্দ্ধশ্বাসে কাঁদিয়া উঠিল।

 রামমোহন চোখ মুছিয়া কহিল—“আজ থাক্ না, মা।”

 বিভা কহিল—“না মোহন, আমি আজই একবার তাঁহাকে দেখিয়া আসিব।”

 রামমোহন কহিল—“যুবরাজ আগে গ্রাম হইতে ফিরিয়া আসুন।”

 বিভা কহিল—“না মোহন, আমি এখনি একবার যাই।”

 বিভা মনে করিয়াছিল, উদয়াদিত্য এ সংবাদ শুনিলে অপমানের ভয়ে পাছে না যাইতে দেন।

 রামমোহন কহিল—“তবে একখানি শিবিকা আনাই।”

 বিভা কহিল—“শিবিকা কেন? আমি কি রাণী যে শিবিকা চাই। আমি একজন সামান্য প্রজার মত, একজন ভিখারিণীর মত যাইব—আমার শিবিকায় কাজ কি?”

 রামমোহন কহিল—“আমার প্রাণ থাকিতে আমি তাহা দেখিতে পারিব না।”

 বিভা কাতর স্বরে কহিল—“মোহন, তোর পায়ে পড়ি আমাকে আর বাধা দিস্ নে—বিলম্ব হইয়া যাইতেছে!”

 রামমোহন ব্যথিত হৃদয়ে কহিল—“আচ্ছা মা, তাহাই হউক্।”

 বিভা সামান্য রমণীর বেশে নৌকা হইতে বাহির হইল। নৌকার ভৃত্যেরা আসিয়া কহিল—“এ কি মা, এমন করিয়া এ বেশে কোথাও যাও।”

 রামমোহন কহিল—“এ ত মায়েরই রাজ্য, যেখানে ইচ্ছা সেইখানেই যাইতে পারেন!”

 ভৃত্যেরা আপত্তি করিতে লাগিল, রামমোহন তাহাদের ভাগাইয়া দিল।