পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৬
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

সপ্তত্রিংশ পরিচ্ছেদ।

 চারিদিকে লােক জন, চারিদিকেই ভিড়। আগে হইলে বিভা সঙ্কোচে মরিয়া যাইত, আজ কিছুই যেন তাহার চোখে পড়িতেছে না। যাহা কিছু দেখিতেছে সমস্তই যেন বিভার মিথ্যা বলিয়া মনে হইতেছে। চারিদিকে যেন একটা কোলাহলময় স্বপ্নের ঘেঁসাঘেঁসি—কিছুই যেন কিছু নয়। চারিদিকে একটা ভিড় চোখে পড়িতেছে এই পর্য্যন্ত, চারিদিক হইতে একটা কোলাহল শােনা যাইতেছে এই পর্য্যন্ত, তাহার যেন একটা কোন অর্থ নাই।

 ভিড়ের মধ্য দিয়া রাজপুরীর দ্বারের নিকট আসিতেই একজন দ্বারী সহসা বিভার হাত ধরিয়া বিভাকে নিবারণ করিল—তখন সহসা বিভা এক মুহূর্ত্তে বাহ্য জগতের মধ্যে আসিয়া পড়িল—চারিদিক দেখিতে পাইল লজ্জায় মরিয়া গেল। তাহার ঘােমটা খুলিয়া গিয়াছিল, তাড়াতাড়ি মাথার ঘােমটা তুলিয়া দিল। রামমােহন আগে আগে যাইতেছিল, সে পশ্চাৎ ফিরিয়া দ্বারীর প্রতি চোখ পাকাইয়া দাঁড়াইল—অদূরে ফর্ণাণ্ডিজ ছিল, সে আসিয়া দ্বারীকে ধরিয়া বিলক্ষণ শাসন করিল। বিভা প্রাসাদে প্রবেশ করিল। অন্যান্য দাসদাসীর ন্যায় বিভা প্রাসাদে প্রবেশ করিল—কেহ তাহাকে সমাদর করিল না!

 ঘরে কেবল রাজা ও রমাই ভাঁড় বসিয়াছিলেন। বিভা গৃহে প্রবেশ করিয়া রাজার মুখের দিকে চাহিয়াই রাজার পায়ের কাছে ভূমিতে পড়িয়া গেল। রাজা শশব্যস্ত হইয়া দাঁড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে তুই? ভিখারিণী—ভিক্ষা চাহিতে আসিয়াছিস্?”

 বিভা নত-মুখ তুলিয়া অশ্রুপূর্ণ নেত্রে রাজার মুখের দিকে চাহিয়া কহিল, “না মহারাজ, আমার সর্ব্বস্ব দান করিতে আসিয়াছি। আমি তােমাকে পরের হাতে সমর্পণ করিয়া বিদায় লইতে আসিয়াছি।”