পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

দুয়ার খুলিয়া দিলেন। “কেন? বিভা? কি হইয়াছে? এত রাত্রে এখানে আসিয়াছ কেন?”

 পাঠকেরা পূর্ব্বেই অবগত হইয়াছেন বিভা উদয়াদিত্যের ভগিনী। বিভা কহিল—“এতক্ষণে বুঝি সর্ব্বনাশ হইল!” সুরমা ও উদয়াদিত্য এক সঙ্গে জিজ্ঞাসা করিয়া উঠিলেন, “কেন, কি হইয়াছে?” বিভা ভয়কম্পিত স্বরে চুপি চুপি কি কহিল। বলিতে বলিতে আর থাকিতে পারিল না, কাঁদিয়া উঠিল, কহিল—“দাদা কি হবে?”

 উদয়াদিত্য কহিলেন “আমি তবে চলিলাম!” বিভা বলিয়া উঠিল “না না তুমি যাইও না।”

উদয়াদিত্য। “কেন বিভা?”

 বিভা। “পিতা যদি জানিতে পারেন? তােমার উপরে যদি রাগ করেন?”

 সুরমা কহিল, “ছিঃ বিভা; এখন কি তাহা ভাবিবার সময়?”

 উদয়াদিত্য বস্ত্রাদি পরিয়া কটিবন্ধে তরবারি বাঁধিয়া প্রস্থানের উদ্যোগ করিলেন। বিভা তাঁহার হাত ধরিয়া কহিল “দাদা তুমি যাইও না, তুমি লােক পাঠাইয়া দাও, আমার বড় ভয় করিতেছে।”

 উদয়াদিত্য কহিলেন—“বিভা এখন বাধা দিস্‌নে; আর সময় নাই।” এই কথা বলিয়া তৎক্ষণাৎ বাহির হইয়া গেলেন।

 বিভা সুরমার হাত ধরিয়া কহিল “কি হবে ভাই? বাবা যদি টের পান?”

 সুরমা কহিল “আর কি হবে? স্নেহের বােধ করি আর কিছু অবশিষ্ট নাই। যেটুকু আছে সেটুকু গেলেও বড় একটা ক্ষতি হইবে না।”

 বিভা কহিল “না ভাই, আমার বড় ভয় করিতেছে। পিতা যদি কোন প্রকার হানি করেন। যদি দণ্ড দেন?”

 সুরমা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া কহিল —“আমার বিশ্বাস—সংসারে যাহার