পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৩

 প্রতাপাদিত্য ইহার একটা সদুত্তর না দিতে পারিয়া কহিলেন “দেখ মন্ত্রী, দিল্লীশ্বরের ভয় দেখাইয়া আমাকে কোন কাজ হইতে নিরস্ত করিতে চেষ্টা করিও না, তাহাতে আমার নিতান্ত অপমান বােধ হয়।”

 মন্ত্রী কহিলেন “প্রজারা জানিতে পারিলে কি বলিবে?”

 প্রতাপ—“জানিতে পারিলে ত?”

 মন্ত্রী—এ কাজ অধিক দিন ছাপা রহিবে না।”

 “এ সংবাদ রাষ্ট্র হইলে সমস্ত বঙ্গদেশ আপনার বিরােধী হইবে। যে উদ্দেশ্যে এই কাজ করিতে চান, তাহা সমূলে বিনাশ পাইবে। আপনাকে জাতিচ্যুত করিবে ও বিবিধ নিগ্রহ সহিতে হইবে।”

 প্রতাপ—“দেখ, মন্ত্রী, আবার তােমাকে বলিতেছি, আমি যাহা করি, তাহা বিশেষ ভাবিয়া করি। অতএব আমি কাজে প্রবৃত্ত হইলে মিছামিছি কতকগুলা ভয় দেখাইয়া আমাকে নিরস্ত করিতে চেষ্টা করিও না। আমি শিশু নহি। প্রতিপদে আমাকে বাধা দিবার জন্য, তােমাকে আমার নিজের শৃঙ্খলস্বরূপে রাখি নাই।”

 মন্ত্রী চুপ করিয়া গেলেন। তাঁহার প্রতি রাজার দুইটি আদেশ ছিল। এক, যতক্ষণ মতের অমিল হইবে ততক্ষণ প্রকাশ করিবে, দ্বিতীয়তঃ বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করিয়া রাজাকে কোন কাজ হইতে নিরস্ত করিবার চেষ্টা করিবে না। মন্ত্রী আজ পর্য্যন্ত এই দুই আদেশের ভালরূপ সামঞ্জস্য করিতে পারেন নাই।

 মন্ত্রী কিয়ৎক্ষণ পরে আবার কহিলেন “মহারাজ, দিল্লীশ্বর”—! প্রতাপ আদিত্য জ্বলিয়া উঠিয়া কহিলেন,—“আবার দিল্লীশ্বর? মন্ত্রী, দিনের মধ্যে তুমি যতবার দিল্লীশ্বরের নাম কর ততবার যদি জগদীশ্বরের নাম করিতে তাহা হইলে পরকালের কাজ গুছাইতে পারিতে। যতক্ষণে না আমার এই কাজটা শেষ হইবে, ততক্ষণ দিল্লীশ্বরের নাম মুখে আনিও না। যখন আজ বিকালে এই কাজ সমাধার সংবাদ পাইব, তখন আসিয়া আমার