পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
বৌ ঠাকুরাণীর হাট

কানের কাছে তুমি মনের সাধ মিটাইয়া দিল্লীশ্বরের নাম জপিও! ততক্ষণ একটু আত্মসংযম করিয়া থাক!”

 মন্ত্রী আবার চুপ করিয়া গেলেন। দিল্লীশ্বরের কথা বন্ধ করিয়া কহিলেন—“মহারাজ, যুবরাজ উদয়াদিত্য—”

 রাজা কহিলেন—“দিল্লীশ্বর গেল, প্রজারা গেল; এখন অবশেষে সেই স্ত্রৈণ বালকটার কথা বলিয়া ভয় দেখাইবে না কি?”

 মন্ত্রী কহিলেন “মহারাজ, আপনি অত্যন্ত ভুল বুঝিতেছেন। আপনার কাজে বাধা দিবার অভিপ্রায় আমার মূলেই নাই।”

 প্রতাপাদিত্য ঠাণ্ডা হইয়া কহিলেন “তবে কি বলিতেছিলে বল!”

 মন্ত্রী বলিলেন “কাল রাত্রে যুবরাজ সহসা অশ্বারােহণ করিয়া একাকী চলিয়া গিয়াছেন, এখনাে ফিরিয়া আসেন নাই।”

 প্রতাপাদিত্য বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “কোন দিকে গেছেন?”

 মন্ত্রী কহিলেন “পূর্ব্বাভিমুখে।”

 প্রতাপাদিত্য দাঁতে দাঁত লাগাইয়া কহিলেন “কখন গিয়াছিল?”

 মন্ত্রী—“কাল প্রায় অর্দ্ধরাত্রের সময়।”

 প্রতাপাদিত্য কহিলেন “শ্রীপুরের জমীদারের মেয়ে কি এখানেই আছে?”

 মন্ত্রী—“আজ্ঞা হাঁ!”

 প্রতাপাদিত্য—“সে তাহার পিত্রালয়ে থাকিলেই ত ভাল হয়।”

 মন্ত্রী কোন উত্তর দিলেন না।

 প্রতাপাদিত্য কহিলেন “উদয়াদিত্য কোন কালেই রাজার মত ছিল না। ছেলেবেলা হইতে প্রজাদের সঙ্গেই তাহার মেশামেশি। আমার সন্তান যে এমন হইবে তাহা কে জানিত? সিংহ-শাবককে কি, কিকরিয়া সিংহ হইতে হয়, তাহা শিখাইতে হয়? তবে কিনা, নরাণাং মাতুলক্রমঃ। বােধ করি সে তাহার মাতামহদের স্বভাব পাইয়াছে।