পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 সে তাড়াতাড়ি ছুটিয়া আসিয়া দ্বার খুলিয়া মুদ্রা দুইটি লইল। তখন যুবরাজ তাহাকে কহিলেন—“বাপু আমি একবারটি তােমার চটি অনুসন্ধান করিয়া দেখিব, কে কে আছে?”

 চটি-রক্ষক সন্দিগ্ধ ভাবে কহিল—“না মহাশয় তাহা হইবেক না।”

 উদয়াদিত্য কহিলেন—“আমাকে বাধা দিও না। আমি রাজবাটির কর্ম্মচারী। দুই জন অপরাধীর অনুসন্ধানে আসিয়াছি।”

 এই কথা বলিয়াই তিনি প্রবেশ করিলেন। চটি-রক্ষক তাঁহাকে আর বাধা দিল না। তিনি সমস্ত অনুসন্ধান করিয়া দেখিলেন। না বসন্ত রায়, না তাঁহার অনুচর, না কোন পাঠানকে দেখিতে পাইলেন। কেবল দুই জন সুপ্তোত্থিতা প্রৌঢ়া চেঁচাইয়া উঠিল “আ মরণ মিন্সে অমন করিয়া তাকাইতেছিস্ কেন?”

 চটি হইতে বাহির হইয়া পথে দাঁড়াইয়া যুবরাজ ভাবিতে লাগিলেন। একবার মনে করিলেন যে, ভালই হইয়াছে, হয়ত আজ দৈবক্রমে তিনি আসিতে পারেন নাই। আবার মনে করিলেন যদি ইহার পূর্ব্ববর্তী কোন চটিতে থাকেন ও পাঠানেরা তাঁহার অনুসন্ধানে সেখানে গিয়া থাকে? এইরূপ ভাবিতে ভাবিতে সেই পথ বাহিয়া চলিতে লাগিলেন। কিয়দ্দূর গিয়া দেখিলেন, বিপরীত দিক্ হইতে একজন অশ্বারােহী আসিতেছে। নিকটে আসিলে কহিলেন “কেও? রতন নাকি?” সে অশ্ব হইতে তৎক্ষণাৎ নামিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিয়া কহিল “আজ্ঞা হাঁ। যুবরাজ আপনি এতরাত্রে এখানে যে?”

 যুবরাজ কহিলেন “তাহার কারণ পরে বলিব। এখন বল ত দাদা মহাশয় কোথায় আছেন।”

 “আজ্ঞা, তাঁহার ত চটিতেই থাকিবার কথা।”

 “সে কি? সেখানে ত তাঁহাকে দেখিলাম না।”

 সে অবাক্ হইয়া কহিল “ত্রিশ জন অনুচর সমেত মহারাজ যশাের