মশালের আলােকে তাহার মুখ নিরীক্ষণ করিয়া কহিলেন “তোমাকে বড়ঘরের লােক বলিয়া মনে হইতেছে।”
পাঠান আবার সেলাম করিয়া কহিল “কেয়া তাজ্জব, মহারাজ, ঠিক ঠাহরাইয়াছেন।”
বসন্তরায় কহিলেন “এখন তােমার কি করা হয়?”
পাঠান নিশ্বাস ছাড়িয়া কহিল “হুজুর দুরবস্থায় পড়িয়াছি, এখন চাষ বাস করিয়া গুজরান্ চালাইতে হইতেছে। কবি বলিতেছেন—“হে অদৃষ্ট, তুমি যে তৃণকে তৃণ করিয়া গড়িয়াছ, ইহাতে তােমার নিষ্ঠুরতা প্রকাশ পায় না, কিন্তু তুমি যে অশথ গাছকে অশথ গাছ করিয়া গড়িয়া অবশেষে ঝড়ের হাতে তাহাকে তৃণের সহিত সমতল করিয়া শােয়াও ইহাতেই আন্দাজ করিতেছি, তােমার মনটা পাথরে গড়া!”
বসন্তরায় নিতান্ত উল্লসিত হইয়া বলিয়া উঠিলেন “বাহবা, বাহবা, কবি কি কথাই বলিয়াছেন। সাহেব, যে দুইটি বয়েৎ আজ বলিলে, ঐ দুইটি লিখিয়া দিতে হইবে।”
পাঠান ভাবিল, তাহার অদৃষ্ট সুপ্রসন্ন। বুড়া লােক বড় সরেস; গরীবের বহুৎ কাজে লাগিতে পারিবে। বসন্তরায় ভাবিলেন, আহা, এককালে যে ব্যক্তি বড়লোক ছিল আজ তাহার এমন দুরবস্থা! চপলা লক্ষ্মীর এ বড় অত্যাচার! মনে মনে তিনি কিছু কাতর হইলেন, পাঠানকে কহিলেন—
“তােমার যে রকম সুন্দর শরীর আছে, তাহাতে ত তুমি অনায়াসে সৈন্যশ্রেণীতে নিযুক্ত হইতে পার।”
পাঠান তৎক্ষণাৎ বলিয়া উঠিল “হুজুর পারি বৈকি! সেই ত আমাদের কাজ। আমার পিতা পিতামহেরা সকলেই তলােয়ার হাতে করিয়া মরিয়াছেন, আমারে সেই এক মাত্র সাধ আছে। কবি বলেন,—
বসন্তরায় হাসিতে হাসিতে কহিলেন “কবি যাহাই বলুন বাপু, আমার