পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
২৩

এমন কাজও করে! কাফেরকে মারিলে পুণ্য আছে বটে, কিন্তু সে পুণ্য এত উপার্জ্জন করিয়াছি যে, পরকালের বিষয়ে আর বড় ভাবনা নাই, কিন্তু ইহকালের সমস্তই যে প্রকার বেবন্দোবস্ত দেখিতেছি, তাহাতে কাফেরটাকে না মারিয়া যদি তাহার একটা বিলিবন্দেজ করিয়া লইতে পারি তাহাতে আপত্তি দেখিতেছি না।”

 বসন্তরায় কিয়ৎক্ষণ চুপ করিয়া আর থাকিতে পারিলেন না; তাঁহার কল্পনা উত্তেজিত হইয়া উঠিল; পাঠানের নিকটবর্ত্তী হইয়া অতি চুপি চুপি কহিলেন “কাহাদের কথা বলিতেছিলাম, সাহেব, জান? তাহারা আমার নাতি ও নাতনী।” বলিতে বলিতে অধীর হইয়া উঠিলেন, ভাবিলেন, “আমার অনুচরেরা কখন ফিরিয়া আসিবে।” আবার সেতার লইয়া গান। আরম্ভ করিলেন।

 একজন অশ্বারােহী পুরুষ নিকটে আসিয়া কহিল “আঃ বাঁচিলাম। দাদা মহাশয়, পথের ধারে এত রাত্রে কাহাকে গান শুনাইতেছ?”

 আনন্দে ও বিস্ময়ে অভিভূত বসন্তরায় তৎক্ষণাৎ তাঁহার সেতার শিবিকা উপরে রাখিয়া উদয়াদিত্যের হাত ধরিয়া নামাইলেন ও তাঁহাকে দৃঢ়রূপে আলিঙ্গন করিলেন; জিজ্ঞাসা করিলেন “খবর কি দাদা? দিদি ভাল আছে ত?”

 উদয়াদিত্য কহিলেন “সমস্তই মঙ্গল।”

 তখন বৃদ্ধ হাসিতে হাসিতে সেতার তুলিয়া লইলেন ও পা দিয়া তাল রাখিয়া মাথা নাড়িয়া গান আরম্ভ করিয়া দিলেন।

“বঁধুয়া অসময়ে কেন হে প্রকাশ?
সকলি যে স্বপ্ন বলে হতেছে বিশ্বাস।
চন্দ্রাবলীর কুঞ্জে ছিলে, সেথায় ত আদর মিলে?
এরি মধ্যে মিটিল কি প্রণয়েরি আশ!