পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

এখনো ত রয়েছে রাত এখনো ত হয় নি প্রভাত,
এখনো এ রাধিকার ফুরায়নি ত অশ্রুপাত।
চন্দ্রাবলীর কুসুমসাজ এখনি কি শুকাল’ আজ?
চকোর হে, মিলাল, কি সে চন্দ্র মুখের মধুর হাস?”

 উদয়াদিত্য পাঠানের দিকে চাহিয়া বসন্তরায়কে কানে কানে জিজ্ঞাসা করিলেন, “দাদা মহাশয় এ কাবুলি কোথা হইতে জুটিল?”

 বসন্তরায় তাড়াতাড়ি কহিলেন “খাঁ সাহেব, বড় ভাল লোক। সমজ্‌দার ব্যক্তি। আজ রাত্রি বড় আনন্দে কাটান গিয়াছে।”

 উদয়াদিত্যকে দেখিয়া খাঁ সাহেব মনে মনে বিশেষ চঞ্চল হইয়া পড়িয়াছিল, কি করিবে ভাবিয়া পাইতেছিল না।

 উদয়াদিত্য পিতামহকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “চটিতে না গিয়া এখানে যে?”

 পাঠান সহসা বলিয়া উঠিল “হুজুর আশ্বাস পাই ত একটা বলি। আমরা রাজা প্রতাপাদিত্যের প্রজা। মহারাজ আমাকে ও আমার ভাইকে আদেশ করেন যে, আপনি যখন যশোহরের মুথে আসিবেন, তথন পথে আপনাকে খুন করা হয়!”

 বসন্তরায় চমকিয়া কহিয়া উঠিলেন “রাম, রাম, রাম!”

 উদয়াদিত্য কহিলেন “বলিয়া যাও!”

 পাঠান—“আমরা কখন এমন কাজ করি নাই, সুতরাং আপত্তি করাতে তিনি আমাদিগকে নানাপ্রকার ভয় দেখান। সুতরাং বাধ্য হইয়া এই কাজের উদ্দেশে যাত্রা করিতে হইল। পথের মধ্যে আপনার সহিত সাক্ষাৎ হইল। আমার ভাই গ্রামে ডাকাত পড়িয়াছে বলিয়া কাঁদিয়া কাটিয়া আপনার অনুচরদের লইয়া গেলেন। আমার উপর এই কাজের ভার ছিল। কিন্তু, মহারাজ, যদিও রাজার আদেশ, তথাপি এমন