পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
২৯

হইয়াছিলেন। আজ আপনি সহসা বিনা কারণে তাঁহাকে নিমন্ত্রণ করিলেন ও পথের মধ্যে কে তাঁহাকে হত্যা করিল। এমন অবস্থায় প্রজারা আপনাকেই এই ঘটনাটির মূল বলিয়া জানিবে।”

 প্রতাপাদিত্য রুষ্ট হইয়া কহিলেন—“তােমার ভাব আমি কিছুই বুঝিতে পারি না মন্ত্রী! এই কথাটা প্রকাশ হইলেই তুমি যেন খুসী হও, আমার নিন্দা রটিলেই তােমার যেন মনস্কামনা পূর্ণ হয়। নহিলে দিন রাত্রি তুমি কেন বলিতেছ যে, কথাটা প্রকাশ হইবেই। প্রকাশ হইবার আমি ত কোন কারণ দেখিতেছি না। বােধ করি, আর কিছুতেই সংবাদটা রাষ্ট্র না হইলে তুমি নিজে গিয়া দ্বারে দ্বারে প্রকাশ করিয়া বেড়াইবে!”

 মন্ত্রী কহিলেন—“মহারাজ, মার্জ্জনা করিবেন। আপনি আমার অপেক্ষা সকল বিষয়েই অনেক ভাল বুঝেন। আপনাকে মন্ত্রণা দেওয়া আমাদের মত ক্ষুদ্র-বুদ্ধি লােকের পক্ষে অত্যন্ত স্পর্ধার বিষয়। তবে, আপনিই না কি আমাকে বাছিয়া মন্ত্রী রাখিয়াছেন, এই সাহসেই ক্ষুদ্রবুদ্ধিতে যাহা মনে হয়, আপনাকে মাঝে মাঝে বলিয়া থাকি। মন্ত্রণায় রুষ্ট হন যদি তবে এ দাসকে এ কার্য্যভার হইতে অব্যাহতি দিন।”

 প্রতাপাদিত্য সিধা হইলেন। মাঝে মাঝে মন্ত্রী যখন তাঁহাকে দুই একটা শক্ত কথা শুনাইয়া দেন, তখন প্রতাপাদিত্য মনে মনে সন্তুষ্ট হন।”

 প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “আমি বিবেচনা করিতেছি, ঐ পাঠান দুটাকে মারিয়া ফেলিলে এ বিষয়ে আর কোন ভয়ের কারণ থাকিবে না।”

 মন্ত্রী কহিলেন “একটা খুন চাপিয়া রাখাই দায়, তিনটা খুন সামলান অসম্ভব। প্রজারা জানিতেই পারিবে।” মন্ত্রী বরাবর নিজের কথা বজায় রাখিলেন।

 প্রতাপাদিত্য বলিয়া উঠিলেন, “তবে ত আমি ভয়ে সারা হইলাম! প্রজারা জানিতে পারিবে! যশােহর রায়গড় নহে; এখানে প্রজাদের