পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

অন্তঃপুরে বৃদ্ধাদের মধ্যে ক্রন্দনের সংক্রামক ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল। কাঁদিবার অভিপ্রায়ে সকলে রাণীর ঘরে আসিয়া সমবেত হইল। উদয়াদিত্য করুণনেত্রে একবার সুরমার মুখের দিকে চাহিলেন। ঘােমটার মধ্য হইতে সুরমা তাহা দেখিতে পাইল, ও চোখ মুছিয়া একটি কথা না কহিয়া ধীরে ধীরে ঘরে চলিয়া গেল।

 সন্ধ্যাবেলা মহিষী প্রতাপাদিত্যকে কহিলেন, আজ উদয়কে সমস্ত বুঝাইয়া বলিলাম। বাছা আমার তেমন নহে। বুঝাইয়া বলিলে বুঝে। আজ তাহার চোখ ফুটিয়াছে।

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।

 বিভার ম্লানমুখ দেখিয়া সুরমা আর থাকিতে পারিল না; তাহার গলা ধরিয়া কহিল, “বিভা তুই চুপ করিয়া থাকিস্ কেন? তাের মনে যখন যাহা হয়, বলিস্ না কেন?”

 বিভা ধীরে ধীরে কহিল, “আমার আর কি বলিবার আছে?”

 সুরমা কহিল, “অনেক দিন তাঁহাকে দেখিস্ নাই, তাের মন কেমন করিবেই ত! তুই তাঁহাকে আসিবার জন্য একখানা চিঠি লেখ্ না। আমি তাের দাদাকে দিয়া পাঠাইবার সুবিধা করিয়া দিব।”

 বিভার স্বামী চন্দ্রদ্বীপপতি রামচন্দ্র রায়ের সম্বন্ধে কথা হইতেছে।

 বিভা ঘাড় হেঁট করিয়া কহিতে লাগিল,—“এখানে কেহ যদি তাঁহাকে গ্রাহ্য না করে, কেহ যদি তাঁহাকে ডাকিবার আবশ্যক বিবেচনা না করে, তবে এখানে তিনি না আসিলেই ভাল। তিনি যদি আপনি আসেন তবে আমি বারণ করিব। তিনি রাজা, যেখানে তাঁহার আদর নাই, সেখানে তিনি কেন আসিবেন? আমাদের চেয়ে তিনি কিসে ছােট যে, পিতা তাঁহাকে অপমান করিবেন?” বলিতে বলিতে বিভা