পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৩৭

বুড়া বিদায় না হয়, তবে না হয় একটু হাসি। ও ডাকিনীর মৎলব আমি বেশ বুঝি, আমাকে তাড়াইবার ফন্দি! কিন্তু শীঘ্র তাহা হইতেছে না। আসিলাম যদি ত ভাল করিয়া জ্বালাইয়া যাইব, আবার যত দিন না দেখা হয় মনে থাকিবে!”

 সুরমা হাসিয়া কহিল, “দেখ দাদা মহাশয়, বিভা আমার কানে কানে বলিল যে মনে রাখানই যদি অভিপ্রায় হয়, তবে যা’ জ্বালাইয়াছ তাহাই যথেষ্ট হইয়াছে, আর নূতন করিয়া জ্বালাইতে হইবে না।”

 কথাটা শুনিয়া বসন্তরায়ের বড়ই আমােদ বােধ হইল। তিনি হাসিতে লাগিলেন।

 বিভা অপ্রতিভ হইয়া বলিয়া উঠিল, “না, আমি কখনাে ও কথা বলি নাই। আমি কোন কথাই কই নাই।”

 সুরমা কহিল, “দাদা মহাশয়, তােমার মনস্কামনা ত পূর্ণ হইল! তুমি হাসি দেখিতে চাহিলে তাহা দেখিলে, কথা শুনিতে চাহিয়াছিলে তাহাও শুনাইলাম, তবে এখন দেশান্তরে যাও।”

 বসন্তরায়। “না ভাই, তাহা পারিলাম না! আমি গােটা-পােনেরো গান ও এক মাথা পাকা চুল আনিয়াছি, সে গুলি সমস্ত নিকাশ না করিয়া যাইতে পারিতেছি না!”

 বিভা আর থাকিতে পারিল না, হাসিয়া উঠিল, কহিল,—“তােমার আধ মাথা বই চুল নাই যে দাদামহাশয়!”

 দাদামহাশয়ের অভিসন্ধি সিদ্ধ হইল। অনেক দিনের পর প্রথম আলাপে বিভার মুখ খুলিতে কিছু আয়ােজনের আবশ্যক করে, কিন্তু দাদা মহাশয়ের কাছে বিভার মুখ একবার খুলিলে তাহা বন্ধ করিতে আবার ততােধিক আয়ােজনের আবশ্যক হয়। কিন্তু দাদা মহাশয় ব্যতীত আর কাহারাে কাছে কোন অবস্থাতেই বিভার মুখ খুলে না।

 বসন্তরায় টাকে হাত বুলাইতে বুলাইতে বলিলেন, “সে এক দিন