পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৪৩

আছে; এক ভেড়ার লড়াই দেখা, আর রমাইয়ের মুখের সামনে ফর্ণাণ্ডিজ্‌কে স্থাপন করা। রাজকার্য্যে প্রবেশ করিয়া অবধি সেনাপতির গায়ে একটা ছিটাগুলি বা তীরের আঁচড় লাগে নাই। অনবরত হাস্যের গোলাগুলি খাইয়া সে ব্যক্তি কাঁদ’ কাঁদ’ হইয়া আসিয়াছে। পাঠকের মার্জ্জনা করিবেন, আমরা রমাইয়ের সকল রসিকতাগুলি লিপি-বদ্ধ করিতে পারিব না, সুরুচির অনুরােধে অধিকাংশ স্থলই পরিত্যাগ করিতে হইবে।

 রাজা চোখ টিপিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তার পরে?”

 “নিবেদন করি মহারাজ! (ফর্ণাণ্ডিজ তাঁহার কোর্ত্তার বােতাম খুলিতে লাগিলেন ও পরিতে লাগিলেন।) আজ দিন তিন চার ধরিয়া সেনাপতি মহাশয়ের ঘরে রাত্রে চোর আনাগোনা করিতেছিল। সাহেবের ব্রাহ্মণী জানিতে পারিয়া কর্ত্তাকে অনেক ঠেলাঠেলি করেন, কিন্তু কোন মতেই কর্ত্তার ঘুম ভাঙাইতে পারেন নাই।”

 রাজা। “হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ।”

 মন্ত্রী। “হােঃ হােঃ হােঃ হােঃ হােঃ হােঃ।”

 সেনাপতি। “হিঃ হিঃ।”

 “দিনের বেলা গৃহিণীর নিগ্রহ আর সহিতে না পারিয়া যােড়হস্তে কহিলেন, “দোহাই তােমার, আজ, রাত্রে চোর ধরিব।” রাত্রি দুই দণ্ডের সময় গৃহিণী বলিলেন, “ওগাে চোর আসিয়াছে!” কর্ত্তা বলিলেন, “ওই যাঃ, ঘরে যে আলাে জ্বলিতেছে! চোর যে আমাদের দেখিতে পাইবে ও দেখিতে পাইলেই পালাইবে।” চোরকে ডাকিয়া কহিলেন, “আজ তুই বড় বাঁচিয়া গেলি। ঘরে আলাে আছে, আজ নিরাপদে পালাইতে পারিবি, কাল আসিস্ দেখি, অন্ধকারে কেমন না ধরা পড়িস্।”

 রাজা “হা হা হা হা!”

 মন্ত্রী “হােহােহােহােহো!”