পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
88
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট।

 সেনাপতি। “হি।”

 রাজা বলিলেন, “তার পরে?”

 রমাই দেখিল, এখনাে রাজার তৃপ্তি হয় নাই। “জানি না, কি কারণে চোরের যথেষ্ট ভয় হইল না। তাহার পর রাত্রেও ঘরে আসিল। গিন্নি কহিলেন, “সর্ব্বনাশ হইল, ওঠ।” কর্ত্তা কহিলেন “তুমি ওঠ না!” গিন্নি কহিলেন “আমি উঠিয়া কি করিব?” কর্ত্তা বলিলেন, “কেন; ঘরে একটা আলাে জ্বালাও না। কিছু যে দেখিতে পাই না!” গিন্নি বিষম ক্রুদ্ধ; কর্ত্তা ততােধিক ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন, “দেখ দেখি, তােমার জন্যইত যথাসর্ব্বস্ব গেল। আলােটা জ্বালাও বন্দুকটা আন!” ইতি মধ্যে চোর কাজকর্ম্ম সারিয়া কহিল, “মহাশয়, এক ছিলাম তামাকু খাওয়াইতে পারেন! বড় পরিশ্রম হইয়াছে।” কর্ত্তা বিষম ধমক দিয়া কহিলেন “রােস্ বেটা! আমি তামাক সাজিয়া দিতেছি। কিন্তু আমার কাছে আসিবি ত এই বন্দুকে তাের মাথা উড়াইয়া দিব।” তামাক খাইয়া চোর কহিল “মহাশয়, আলােটা যদি জ্বালেন ত উপকার হয়। সিঁধকাটিটা পড়িয়া গিয়াছে খুঁজিয়া পাইতেছি না।” সেনাপতি কহিলেন “বেটার ভয় হইয়াছে। তফাতে থাক্, কাছে আসিস্ না।” বলিয়া তাড়াতাড়ি আলো জ্বলিয়া দিলেন। ধীরে সুস্থে জিনিষ পত্র বাঁধিয়া চোর চলিয়া গেল। কর্ত্তা গিন্নিকে কহিলেন “বেটা বিষম ভয় পাইয়াছে।”

 রাজা ও মন্ত্রী হাসি সামলাইতে পারেন না। ফর্ণাণ্ডিজ্ থাকিয়া থাকিয়া মাঝে মাঝে “হিঃ হিঃ” করিয়া টুক্‌রা টুক্‌রা হাসি টানিয়া টানিয়া বাহির করিতে লাগিলেন।

 রাজা কহিলেন “রমাই, শুনিয়াছ আমি শ্বশুরালয়ে যাইতেছি?”

 রমাই মুখভঙ্গী করিয়া কহিল, “অসারং খলু সংসারং সারং শ্বশুরমন্দিরং (হাস্য। প্রথমে রাজা, পরে মন্ত্রী, পরে সেনাপতি।) কথাটা মিথ্যা নহে। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া) শ্বশুরমন্দিরের সকলি সার,—আহারটা,