পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৪৫

সমাদরটা; দুধের সরটি পাওয়া যায়, মাছের মুড়টি পাওয়া যায়; সকলি সার পদার্থ। কেবল সর্ব্বাপেক্ষা অসার ঐ স্ত্রীটা!”

 রাজা হাসিয়া কহিলেন “সে কিহে, তােমার অর্দ্ধাঙ্গ”—

 রমাই যােড়হস্তে ব্যাকুলভাবে কহিল, “মহারাজ তাহাকে অর্দ্ধাঙ্গ বলিবেন না। তিন জন্ম তপস্যা করিলে আমি বরঞ্চ, এক দিন তাহার অর্দ্ধাঙ্গ হইতে পারিব, এমন ভরসা আছে। আমার মত পাঁচটা অর্দ্ধাঙ্গ জুড়িলেও তাহার আয়তনে কুলায় না!” (যথাক্রমে হাস্য) কথাটার রস আর সকলেই বুঝিল, কেবল মন্ত্রী পারিলেন না, এই নিমিত্ত মন্ত্রীকে সর্ব্বাপেক্ষা অধিক হাসিতে হইল।

 রাজা কহিলেন, “আমি ত শুনিয়াছি, তােমার ব্রাহ্মণী বড়ই শান্তস্বভাবা ও ঘরকন্নায় বিশেষ পটু।”

 রমাই। “সে কথায় কাজ কি! ঘরে আর সকল রকম জঞ্জালই আছে, কেবল আমি তিষ্ঠিতে পারি না। প্রত্যুষে গৃহিণী এমনি ঝাঁটাইয়া দেন যে, একেবারে মহারাজের দুয়ারে আসিয়া পড়ি।”

 এইখানে কথা প্রসঙ্গে রমাইয়ের ব্রাহ্মণীর পরিচয় দিই। তিনি অত্যন্ত কৃশাঙ্গী ও দিনে দিনে ক্রমেই আরো ক্ষীণ হইয়া যাইতেছেন। রমাই ঘরে আসিলে তিনি কোথায় যে আশ্রয় লইবেন ভাবিয়া পান না। রাজসভায় রমাই এক প্রকার ভঙ্গীতে দাঁত দেখায় ও ঘরে আসিয়া গৃহিণীর কাছে আর এক প্রকার ভঙ্গীতে দাঁত দেখায়। কিন্তু গৃহিণীর যথার্থ স্বরূপ বর্ণনা করিলে নাকি হাস্যরস না আসিয়া করুণ রস আসে, এই নিমিত্ত রাজসভায় রমাই তাহার গৃহিণীকে স্থূলকায়া ও উগ্রচণ্ডা করিয়া বর্ণনা করেন, রাজা ও মন্ত্রীরা হাসি রাখিতে পারেন না!

 হাসি থামিলে পর রাজা কহিলেন, ওহে রমাই, তােমাকে যাইতে হইবে, সেনাপতিকেও সঙ্গে লইব।”

 সেনাপতি বুঝিলেন, এবার রমাই তাঁহার উপর দ্বিতীয় আক্রমণ