মন্ত্রী দীর্ঘ এক কাগজ বাহির করিয়া রাজার হাতে দিলেন, রাজা পড়িতে লাগিলেন। কিয়দ্দূর পড়িয়া একবার চোখ তুলিয়া জামাতাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “গত বৎসরের মত এবার ত তােমাদের ওখানে বন্যা হয় নাই?”
রামচন্দ্র “আজ্ঞা না। আশ্বিন মাসে একবার জল বৃদ্ধি—”
প্রতাপাদিত্য—“মন্ত্রি, এ চিঠিখানার অবশ্য একটা নকল রাখা হইয়াছে।” বলিয়া আবার পড়িতে লাগিলেন। পড়া শেষ করিয়া জামাতাকে কহিলেন, “যাও, বাপু, অন্তঃপুরে যাও।”
রামচন্দ্র ধীরে ধীরে উঠিলেন। তিনি বুঝিতে পারিয়াছেন তাঁহার অপেক্ষা প্রতাপাদিত্য কিসে বড়!
নবম পরিচ্ছেদ।
রামমােহন মাল যখন অন্তঃপুরে আসিয়া বিভাকে প্রণাম করিয়া কহিল, “মা তােমায় একবার দেখিতে এলাম” তখন বিভার মনে বড় আহ্লাদ হইল। রামমােহনকে সে বড় ভালবাসিত। কুটুম্বিতার নানাবিধ কার্য্যভার বহন করিয়া রামমােহন প্রায় মাঝে মাঝে চন্দ্রদ্বীপ হইতে যশােহরে আসিত। কোন আবশ্যক না থাকিলেও অবসর পাইলে সে এক একবার বিভাকে দেখিতে আসিত। রামমােহনকে বিভা কিছুমাত্র লজ্জা করিত না। বৃদ্ধ, বলিষ্ঠ, দীর্ঘ, রামমােহন যখন “মা” বলিয়া আসিয়া দাঁড়াইত তখন তাহার মধ্যে এমন একটা বিশুদ্ধ, সরল, অলঙ্কারশূন্য স্নেহের ভাব থাকিত, যে বিভা তাহার কাছে আপনাকে নিতান্ত বালিকা মনে করিত। বিভা তাহাকে কহিল “মােহন, তুই এতদিন আসিস্ নাই কেন?”
রামমােহন কহিল, “তা মা, ‘কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কখন নয়,’ তুমি কোন্ আমাকে মনে করিলে? আমি মনে মনে কহিলাম, মা না