পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৫৭

কাঁপিতে কহিল, “হতভাগা, তাের কি আর মরিবার জায়গা ছিল না?”

 রমাই কহিল, “মহারাজ আমাকে আদেশ করিয়াছেন।” রামমােহন বলিয়া উঠিল, “কি বলিলি, নিমকহারাম? ফের অমন কথা বলিবি ত, এই সানের পাথরে তাের মুখ ঘষিয়া দিব!” বলিয়া তাহার গলা টিপিয়া ধরিল।

 রমাই আর্ত্তনাদ করিয়া উঠিল। তখন রামমােহন খর্ব্বকায় রমাইকে চাদর দিয়া বাঁধিয় বস্তার মতন করিয়া ঝুলাইয়া অন্তঃপুর হইতে বাহির, হইয়া গেল।

 দেখিতে দেখিতে কথাটা অনেকটা রাষ্ট্র হইয়া গিয়াছে। রাত্রি তখন দুই প্রহর অতীত হইয়া গিয়াছে। রাজার শ্যালক আসিয়া সেই রাত্রে প্রতাপাদিত্যকে সংবাদ দিলেন যে, জামাতা রমাই ভাঁড়কে রমণীবেশে অন্তঃপুরে লইয়া গেছেন! সেখানে সে পুর-রমণীদের সহিত, এমন কি, মহিষীর সহিত বিদ্রূপ করিয়াছে।

 তখন প্রতাপাদিত্যের মুর্ত্তি অতিশয় ভয়ঙ্কর হইয়া উঠিল। রােষে তাঁহার সর্ব্বাঙ্গ আলােড়িত হইয়া উঠিল। স্ফীতজটা সিংহের ন্যায় শয্যা হইতে উঠিয়া বসিলেন। কহিলেন, “লছমন্ সর্দ্দারকে ডাক।” লছমন্ সর্দারকে কহিলেন—“আজ রাত্রে আমি রামচন্দ্র রায়ের ছিন্ন মুণ্ড দেখিতে চাই!” সে তৎক্ষণাৎ সেলাম করিয়া কহিল, “যাে হুকুম মহারাজ!” তৎক্ষণাৎ তাঁহার শ্যালক তাঁহার পদতলে পড়িল, কহিল— “মহারাজ, মার্জ্জনা করুন, বিভার কথা একবার মনে করুন। অমন কাজ করিবেন না!” প্রতাপাদিত্য পুনরায় দৃঢ়স্বরে কহিলেন, “আজ রাত্রের মধ্যেই আমি রামচন্দ্র রায়ের মুণ্ড চাই!” তাঁহার শ্যালক তাঁহার পা জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, “মহারাজ, আজ তাঁহারা অন্তঃপুরে শয়ন করিয়াছেন, মার্জ্জনা করুন, মহারাজ মার্জ্জনা করুন!” তখন প্রতাপাদিত্য